পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 প্রসন্ন চক্কত্তি আবার কিছুদূর যেতে গয়া পেছন থেকে বললে—আবার আসবেন এখন একদিন—কানে গেল কথাডা? আসবেন—

 —কেন আসবো না। নিশ্চয় আসবো। ঠিক আসবো।

 দূরের মাঠের পথ ধরলো প্রসন্ন চক্কত্তি। অনেক দূর সে চলে এসেচে গয়াদের বাড়ি থেকে। বরদা দেখে ফেলে নি আশা করা যাচ্চে। কেমন মিষ্টি সুরে কথা কইলে গয়া, কেমন ভাবে তাকে সরিয়ে দিলে পাছে মা দেখে ফেলে!

 কিন্তু তার চেয়েও অদ্ভুত, তার চেয়েও আশ্চর্য, সব চেয়ে আশ্চর্য হচ্চে, ওঃ, ভাবলে এখনো সারাদেহে অপূর্ব আনন্দের শিহরণ বয়ে যায়, সেটা হচ্চে গয়ার সেই মশা মারা।

 এত কাছে এসে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। অমন সুন্দর ভঙ্গিতে।

 সত্যিই কি মশা বসেছিল তার গায়ে? মশা মারবার ছলে গয়া কি তা কাছে আসতে চায় নি?

 কি একটা দেখিয়েছিল বটে গয়া, প্রসন্ন চক্কত্তির তখন কি চোখ ছিল একটা মরা মশা দেখবার? সন্দে হয়ে এসেছে। ভাদ্রের নীল আকাশ দূর মাঠের উপর উপুড় হয়ে আছে। বাঁশের নতুন কোঁড়াগুলো সারি সারি সোনার সড়কির মত দেখাচ্ছে রাঙা রোদ পড়ে বনোজোলার যুগীপাড়ার বাঁশবনে-বনে। ওখানেই আছে গয়ার মা বরদা। ভাগ্যিস বাড়ি ছেড়ে গিয়েছিল! নইলে বরদা আজ উপস্থিত থাকলে গয়ার সঙ্গে কথাই হোতো না। দেখাই হোতো না। বৃথা যেতো এমন চমৎকার শরতের দিন, বৃথা যেতো ভাদ্রের সন্ধ্যা…

 সারা জীবনের মধ্যে এই একটি দিন তার। চিরকাল যা চেয়ে এসেছিল, আজ এতদিন পরে তা কি মিললো? নারীর প্রেমের জন্য সারা জীবনটা বুভুক্ষু ছিল না কি ওর?


 প্রসন্ন চক্কত্তি অনেক দেরি করে আজ বাসায় ফিরলো। নীলকুঠির বাসা, ছোট্ট একখানা ঘর, তার সঙ্গে খড়ের একটা রান্নাঘর। সদর আমীন নকুল ধাড়া আর অনুপস্থিত তাই রক্ষে, নতুবা বকিয়ে বকিয়ে মারতো এতক্ষণ

২১৭