কানাই কবিরাজ ভালো সংস্কৃতজ্ঞ, ব্যাকরণের উপাধি পর্যন্ত পড়েছিলেন।
ছাত্রকে বললেন—অকামঃ সর্ব্বকামো বা মোক্ষকাম উদার ধী।::::::তীব্রেণ ভক্তিযোগেন যজেতঃ পুরুষং পরং॥
অকাম অর্থাৎ বিষয়কামনাশূন্য হয়ে ভক্তিদ্বারা ঈশ্বরকে ভজনা করবে। বুঝলে বাবা, তাঁর অসীম দয়া - চৈতন্যচরিতামৃতে কবিরাজ গোস্বামী বলেছেন—
সকাম ভক্ত অজ্ঞ জানি দয়ালু ভগবান
স্বচরণ দিয়া করে ইচ্ছার নিধান—
তিনিই কৃপা করেন—একবার তাঁর চরণে শরণ নিলেই হোলো। মানুষের অজ্ঞতা দেখে তিনি দয়া না করলি কে করবে?
শিষ্য কাঠ সংগ্রহ করে আনলে বাঁশবন থেকে। গুরু বললেন—একটা ওল তুলে আনলি নে কেন বাঁশবন থেকে? আছে?
—অনেক আছে।
—নিয়ে আয়। বটকৃষ্টদের বাড়ি থেকে শাবল একখানা চেয়ে নে, আর ওদের দাখানা দিয়ে এসেচিস? দিয়ে আয়। বড় দেখে ওল তুলবি, খাবার কিছু নেই ধরে। ওল-ভাতে সর্ষেবাটা দিয়ে আর—ওরে অমনি দুটো কাঁচা নংকা নিয়ে আসিস বটকেষ্টদের বাড়ি থেকে—
—মুখ চুলকোবে না, গুরুদেব?
—ওরে না না। সর্ষেবাটা মাখলি আবার মুখ চুলকোবে—
—ওল টাটকা তুলে খেতি নেই, রোদে শুকিয়ে নিতি হয় দু’একদিন—
—সে সব জানি। আজ ভাত দিয়ে খেতি হবে তো? তুই নিয়ে আয় গিয়ে, যা—তুইও এখানে খাবি—
ওল-ভাতে ভাত দিয়ে গুরুশিষ্য আহার সমাপ্ত ক’রে আবার পড়াশুনো আরম্ভ ক’রে দিলে। বিকেলবেলা হয়ে গেল, বাঁশবনে পিড়িং পিড়িং ক’রে ফিঙে পাখী ডাকচে, ঘরের মধ্যে অন্ধকারে আর দেখা যায় না, তখন গুরুর আদেশে শিষ্য নিমাই চক্রবর্তী পুঁথি বাঁধলে। ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করে বললে—তাহোলে যাই গুরুদেব।