পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 মেমসাহেব দ্বিরুক্তি না করে নিজের গলা থেকে সরু হারছড়াটা খুলে প্রসঙ্গ আমীনের দিকে ছুঁড়ে ফেলে দিলে।

 প্রসন্ন শশব্যস্ত হয়ে সেটা লুফে নিলে দু’হাতে।

 সকলে অবাক। হরকালী সুর স্তম্ভিত। করিম লেঠেল হাঁ ক’রে রইল।

 বজরা ঘাট ছেড়ে চলে গেল।

 প্রসন্ন আমীন অনেকক্ষণ বজরার দিকে চেয়ে চেয়ে ঘাটে দাঁড়িয়ে রইল, তারপর উড়ানির খুঁটে চোখের জল মুছে ধীরে ধীরে ঘাটের ওপরে উঠে চলে গেল।


 বড় সাহেবের মেম চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নীলকুঠির লক্ষ্মী চলে গেল।


 গয়ামেম হাসতে হাসতে বললে—কেমন খুড়োমশাই? আদ্দেক ভাগ কিন্তু দিতি হবে—

 দুপুর বেলা। নীল আকাশের তলায় উঁচু গাছে গাছে বহু ঘুঘুর ডাকে মধ্যাহ্নের নিস্তব্ধতা ঘনতর ক’রে তুলেচে। শামলতার সুগন্ধি ফুল ফুটেচে অদূরবর্তী ঝোপে। পথের ধারে বটতলায় দুজনের দেখা। দেখাটা খুব আকস্মিক নয়, প্রসন্ন চক্কত্তি অনেকক্ষণ থেকে এখানে অপেক্ষা করছিল। সে হেসে বললে—নিও তোমার জন্যেই তো হোল—

 —কেমন, বলেছিলাম না?

 —তুমিই নাও ওটা। তোমারেই দেবো—

 —পাগল! আমারে অত বোকা পালেন? সায়েবসুবোর জিনিস আমি ব্যাভার করতি গেলে কি বলবে সবাই? ওতে আমি হাত দিই কখনো?

 —তোমারে বড় ভালো লাগে গয়া—

 —বেশ তো।

 —তোমারে দেখলি এত আনন্দ পাই—

 —এই সব কথা বলবার জন্যি বুঝি এখানে দাঁড়িয়ে ছেলেন?

 —তা—তা—

২২৮