পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —বেশ, চললাম এখন। শুনুন আর একটা কথা বলি। আপনি অন্য জায়গায় চাকরির চেষ্টা করুন—

 —সে আমি সব বুঝি। এদের দাপট কমেচে তা আমি দেখতে পাচ্চিনে, এত বোকা নই। শুধু তোমারে ফেলে কোনো জায়গায় যেতি মন সরে না—

 —আবার ওই সব কথা!

 —চলো না কেন আমার সঙ্গে?

 —কনে?

 —চলো যেদিকি চোখ যায়—

 গয়া খিল্‌ খিল্‌ করে হেসে বললে—এইবার তা’হলি ষোলকলা পুণ্ন হয়। যাই এবার আপনার সঙ্গে যেদিকি দুই চোখ যায়—

 প্রসন্ন চক্কত্তি ভাব বুঝতে না পেরে চুপ করে রইল। গয়া হাসিমুখে বললে—কথা বলচেন না যে? ও খুড়োমশাই?

 —কি বলবো? তোমার সঙ্গে কথা বলতি সাহস হয় না যে।

 —খুব সাহস দেখিয়েচেন, আর সাহসে দরকার নেই। আপনারে একটা কথা বলি। মাবে ফেলে ক’নে যাবো বলুন! এতদিনে যাদের নুন খেলাম, তাদের ফেলে কোথায় যাবো? ওরা এতদিন আমারে খাইয়েচে, মাখিয়েচে, যত্ন-আত্যি কম করে নি—ওদের ফেলে গেলি ধম্মে সইবে না। আপনি চলে যান—ভাত খাচ্চেন ক’নে আজকাল? রেঁধে দিচ্চে কেডা?

 প্রসন্ন চক্কত্তি কথার উত্তর দিতে পারে না, অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ওর মুখের দিকে। এসব কি ধরনের কথা? কেউ তাকে এমন ধরনের কথা বলেচে কখনো?…আবার সেই আনন্দের শিহরণ নেমেচে ওর সর্বাঙ্গে। কি অপূর্ব অনুভূতি। গা ঝিম-ঝিম করে ওঠে যেন। চোখে জল এসে পড়ে। অন্যমনস্কভাবে বলে—ভাত? ভাত রান্না…ও ধরো…না, নিজেই রাঁধি আজকাল।

 —একবার দেখতি ইচ্ছে হয় কি রকম রাঁধেন—

 —প্রসাদ পাবা?

২২৯