খোকা বললে—বিষ্টি হবে।
—হাঁ, হবেই তো।
ভবানীর কোলে উঠে খোকা যখন যায়, তখন তার মুখের হাসি দেখে ভাবেন এর সঙ্গ সত্যিই সৎসঙ্গ। খোকাও তাঁকে একদণ্ড ছাড়তে চায় না। বাপছেলের সম্বন্ধের গভীর রসের দিক ভবানীর চোখে কি স্পষ্ট হয়েই ফুটলো?
কোলে উঠে যেতে যেতে খোকা হাসে আর বলে—কাণ্ড! কাণ্ড!
এ কথার বিশেষ কি অর্থ সে-ই জানে। বোধ হয় এই বলতে চায় যে কি মজার ব্যাপারই না হয়েছে। ভবানী জানেন খোকা মাঝে মাঝে দুই হাত ছড়িয়ে বলে—কাণ্ড!
কাণ্ড মানে তিনিও ঠিক জানেন না, তবে উল্লাসের অভিব্যক্তি এটুকু বোঝেন। কৌতুকের সুরে ভবানী বললেন—কিসের কাণ্ড রে খোকা?
—কাণ্ড! কাণ্ড!
—কোথায় যাচ্ছিস রে খোকা?
—মুকি আনতে!
—মুড়কি খাবে বাবা?
—হুঁ।
—চল কিনে দেবো।
ইছামতী নদী বর্ষার জলে কুলে-কূলে ভর্তি। খোকাকে নিয়ে গিয়ে একটা নৌকোর ওপর বসলেন ভবানী। দুই তীর ঘন সবুজ বনঝোপ, লতা দুলচে জলের ওপর, বাবলার সোনালী ফুল ফুটেছে তীরবর্তী বাবলা গাছের নত শাখায়। ওপার থেকে নীল নীরদমালা ভেসে আসে, হলদে বসন্তবৌরি এসে বসে সবুজ বননিকুঞ্জের ও ডাল থেকে ও ডালে।…
ভবানী বাঁড়ুয্যে মুগ্ধ হয়ে ভাবেন, কোন মহাশিল্পীর সৃষ্টি এই অপরূপ শিল্প! এই শিশুও তার অন্তর্গত। এই বিপুল কাকলীপূর্ণ অপরাহ্নে, নদীজলের স্নিগ্ধতায় শ্রীভগবান বিরাজ করছেন জলে, স্থলে, ঊর্ধ্বে, অধে, দক্ষিণে, উত্তরে, পশ্চিমে, পূবে। যেখানে তিনি সেখানে এমন সুন্দর শিশু অনাবিল হাসি