বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হাসে, অমন সুন্দর বসন্তবৌরি পাখীর হলুদ রংয়ের দেহে ঝলক ফুটে ওঠে। ঘন বনের ফাঁকে ফাঁকে বনকলমী ফুল ওই রকম ফোটে জলের ধারে ঝোপে ঝোপে। তাঁর বাইরে কি আছে? জয় হোক তাঁর।

 খোকা হাত ছাড়িয়ে বলে—কি জল! কি জল!

 এগুলো সে সম্প্রতি কোথা থেকে যেন শিখেচে—সর্বদা প্রয়োগ করে।

 ভবানী বললেন—খোকা, নদী বেশ ভালো?

 খোকা ঘাড় নেড়ে বললে—ভালো।

 —বাড়ি যাবি?

 —হুঁ।

 —তবে যে বললি ভালো?

 —মার কাছে যাবো…

 অন্ধকার বাঁশবনের পথে ফিরতে খোকার বড় ভয় হয়। দু’বছরের শিশু, কিছু ভালো বুঝতে পারে না…সামনের বাঁশঝাড়টার ঘন অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে তার হঠাৎ বড় ভয় হয়। বাবাকে ভয়ে জড়িয়ে ধরে বলে—বাবা ভয় করচে, ওতা কি?

 —কই কি, কিছু না।

 খোকা প্রাণপণে বাবার গলা জড়িয়ে থাকে। তাকে ভয় ভুলিয়ে দেবার জন্যে ভবানী বাঁড়ুয্যে বললেন—এগুলো কি দুলচে বনে?

 খোকা চোখ খুলে চাইলে, এতক্ষণ চোখ বুজিয়ে রেখেছিল ভয়ে। চেয়ে দেখে বললে—জোনা পোকা।

 ভবানী বললেন—কি পোকা বললি? চেয়ে দেখে বল—

 —জোনা পোকা।

 —মাকে গিয়ে বলবি?

 —হু।

 —কোন্‌ মাকে বলবি?

 —তিলুকে।

২৩২