পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বলে দিচ্ছি ও-কাজ আমরা কেউ করবো না। আচ্ছা দিদি, তিলু-ঠাকুরঝিকে কি চমৎকার দেখাচ্ছে! বিয়ের জল গায়ে না পড়তেই এই, বিয়ের জল পড়লে না জানি কত লোকের মুণ্ডু ঘুরিয়ে দেয় আমাদের তিলু-ঠাকুরঝি!

 গাঙ্গুলীদের বিধবা ভগ্নী সরস্বতী বললে—বৌদিদির যেমন কথা। মুণ্ডু ঘুরিয়ে দিতে হয় ওর নিজের সোয়ামীরই ঘোরাবে, অপর কারে আবার খুঁজে বার করতে যাচ্চে ও?

 সবাই হেসে উঠলো।


 পরদিন ভবানী বাঁড়ুয্যের সঙ্গে শুভ গোধূলি-লগ্নে তিন বোনেরই একসঙ্গে বিয়ে হয়ে গেল। হ্যাঁ, পাত্রও সুপুরুষ বটে। বয়স পঞ্চাশই বোধ হয় হবে কিন্তু মাথার চুলে পাক ধরেনি, গৌরবর্ণ সুন্দর সুঠাম সুগঠিত দেহ। দিব্যি একজোড়া গোঁফ। কুস্তীগিরের মত চেহারার বাঁধুনি।

 বাসরঘরে মেয়েরা আমোদ-প্রমোদ করে চলে যাওয়ার পরে ভবানী বাঁড়ুয্যে বললেন—তিলু, তোমার বোনেদের সঙ্গে আলাপ করাও।

 তিলোত্তমার গৌরবর্ণ সুঠাম বাহুতে সোনার পৈঁছে, মনিবন্ধে সোনার খাড়ু, পায়ে গুজরীপঞ্চম, গলায় মুড়কি মাদুলি—লাল চেলি পরনে। পৈঁছে নেড়ে বললে—আপনি ওদের কি চেনেন না?

 —তুমি বলে দাও নয়।

 —এর নাম স্বরবালা, ওর নাম নীলনয়না।

 —আর তোমার নাম কি?

 —আমার নাম নেই।

 —বলো সত্যি। কি তোমার নাম?

 —তি-লো-ত্ত-মা।

 —বিধাতা বুঝি তিলে তিলে তোমায় গড়েচেন?

 তিলু, বিলু ও নীলু একসঙ্গে খিল্‌খিল্‌ করে হেসে উঠলো। তিলু বললে— না গো মশাই, আপনি শাস্তরও ছাই জানেন না—

২০