নীলবিদ্রোহ তিন জেলায় সমান দাপটে চললো। সার উইলিয়ম গ্রে সব দেখে গিয়ে যে রিপোর্ট পাঠালেন, নীলকরদের ইতিহাসে সে একখানা বিখ্যাত দলিশ। তিন জেলার বহু নীলকুঠি উঠে গেল এর দু’বছরের মধ্যে। বেশির ভাগ নীলকর সাহেব কুঠি বিক্রি করে কিংবা এদেশী কোনো বড়লোককে ইজারা দিয়ে সাগর পাড়ি দিলে। দু’একটা কুঠির কাজ পূর্ববৎ চলতে লাগলো তবে সে দাপটের সিকিও কোথাও ছিল না।
শেষোক্ত দলের একজন হচ্ছে শিপ্টন্ সাহেব। ডেভিড্ সাহেব চলে গিয়েছিল স্ত্রীপুত্র নিয়ে, কিন্তু শিপ টন ছাড়বার পাত্র নয়—হরকালী সুরের সাহায্য নিয়ে মিঃ শিপ্টন্ কুঠি চালাতে লাগলো আগেকার মত। পুরাতন কর্মচারীরা সবাই আগের মত কাজ চালাতে লাগলো।
নীলকর সাহেবদের বিষদাঁত ভেঙে গিয়েচে আজকাল। আশপাশে কোনো নীলকুঠিতে আর সাহেব নেই, কুঠি বিক্রি করে চলে গিয়েচে। দু’একটা কুঠিতে সাহেব আছে, কিন্তু তারা নীলচাষ করে সামান্য, জমিদারি আছে—তাই চালায়।
এই পল্পীর নিভৃত অন্তরালে পুরনো সাহেব শিপ্টন্ পূর্ববৎ দাপটেই কিন্তু কাজ চালাচ্ছিল, ওকে আগের মত ভয়ও করে অনেকে। নীলবিদ্রোহের উত্তেজনা থেমে যাবার পরে সাহেবের প্রতি ভয়-ভক্তি আবার ফিরে এসেছিল। হরকালী সুরও গোঁপে চাড়া দিয়েই বেড়ায়। সাহেব টম্টম্ হাঁকিয়ে গেলে এখনো লোক সম্ভ্রমের চোখে চেয়ে দেখে। একদিন শিপ্টন্ তাকে ডেকে বললে—ডেওয়ান, এবার ডুর্গা পূজা কবে হইবে?
হরকালী সুর বললেন—আশ্বিন মাসের দিকে, হুজুর।
—এবার কুঠিতে পূজা করো—
—খুব ভাল কথা হুজুর। বলেন তো সব ব্যবস্থা করি—
—যা টাকা খরচ হইবে, আমি দিবে। কবির গান দিটে হইবে।
—আজ্ঞে গোবিন্দ অধিকারীর ভালো যাত্রার দল বায়না ক’রে আসি হুকুম করুন।