পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 বিলু বললে—বিধাতা পৃথিবীর সব সুন্দরীর—

 নিলু বললে—রূপের ভাল ভাল অংশ—

 তিলু বললে—নিয়ে—একটু একটু করে—

 ভবানী হেসে বললেন-ও বুঝেচি! তিলোত্তমাকে গড়েছিলেন।

 তিলু হেসে বললে—আপনি তাও জানেন না।

 নিলু ও বিলু একসঙ্গে বলে উঠলো—আমরা আপনার কান মলে দেবো—

 তিলু বোনেদের দিকে চেয়ে বললে—ও কি? ছিঃ—

 বিলু বলে—“ছিঃ” কেন, আমরা বলবো না? সতীদিদি তো কান মলেই দিয়েছে আজ। দেয়নি?

 ভবানী গম্ভীর মুখে বল্লেন—সে হলো সম্পর্কে শ্যালিকা। তোমরা তো তা নও। তোমরা কি তোমাদের স্বামীর কান মলে দেবার অধিকারী? বুঝেসুজে কথা বলো।

 নিলু বললে—আমরা কি, তবে বলুন।

 তিলু বোনের দিকে চোখ পাকিয়ে বললে—আবার!

 ভবানী হেসে বল্লেন—তোমরা সবাই আমার স্ত্রী। আমার সহধর্মিণী।

 বিলু বললে—আপনার বয়েস কত?

 ভবানী বললেন—তোমার বয়েস কত?

 —আপনি বুড়ো।

 তিলু চোখ পাকিয়ে বোনের দিকে চেয়ে বললে—আবার!


 ভবানী বাঁড়ুয্যে বাস করবেন রাজারাম-প্রদত্ত জমিতে। ঘরদোর বাঁধবার ব্যবস্থা হয়ে গিয়েচে, আপাতত তিনি শ্বশুরবাড়িতেই আছেন অবিশ্যি। এ এক নূতন জীবন। গিয়েছিলেন সন্ন্যাসী হয়ে বেরিয়ে, কত তীর্থে তীর্থে ঘুরে এসে শেষে এমন বয়সে কিনা পড়ে গেলেন সংসারের ফাঁদে।

 খুব খারাপ লাগচে না! তিল সত্যি বড় ভালো গৃহিণী, ভবানী ওর কথা চিন্তা করলেই আনন্দ পান। তাঁকে যেন ও দশ হাত বাড়িয়ে ঘিরে রেখেচে

২১