পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গন্ধে বাতাস ভরপুর, নদীর ধারের পলিমাটির কাদায় কাশফুল উড়ে পড়ে বীজসুদ্ধ আটকে যাচ্চে, নদীর ধারের ছাতিম গাছটাতে থোকা থোকা ছাতিম ফুল ফুটে আছে, সপ্তপর্ণ পুষ্পের সুরভি ভুর ভুর করচে হেমন্ত অপরাহ্রের স্নিগ্ধ ও একটুখানি ঠাণ্ডার আমেজ লাগা বাতাসে।

 এই সময় ভবানী স্ত্রী ও খোকার সঙ্গে নদীর ধারে প্রায়ই যান। নদীর এই শান্ত, শ্যাম পরিবেশের মধ্যে ভগবানের কথা খুব জমে। সেদিনও ভবানী আসবেন। তার মত এই, খোকাকে নির্জনে এই সময় বসে বসে ভগবানের কথা বলতে হবে। ওর মন ও চোখ ফোটাতে হবে, উদার নীল আকাশের তলে বননীল দিগন্তের বাণী শুনিয়ে। ভবানী এলেন একটু পরে। তিলু বললে-ওই শ্লোকটা বুঝিয়ে দিন-

 —সেই প্রশ্নোপনিষদেরটা? স এনং যজমানমহরহর্ব্রহ্ম গময়তি?

 一হুঁ।

 —তিনি যজমানকে প্রতিদিন ব্রহ্মভাব আস্বাদ করান।

 —তিনি কে?

 ーভগবান।

 —যজমান কে?

 —যে তাঁকে ভক্তিপূর্বক উপাসনা কবে।

 —এখানে মনই যজমান, এরকম একটা কথা আগে আছে না?

 —আছেই তো-ও কারা কথা বলচে? ঝোপের মধ্যে? দাড়াও-দেখি-

 —এগিয়ে যাবেন না। আগে দেখুন। কি-আমিও যাবো?

 ওরা গিয়ে দেখলে নিস্তারিণী আর গোবিন্দ ওদের দিকে পেছন ফিরে বসে, একমনে আলাপে মত্ত-এবং দেখে মনে হচ্ছিল না যে ওরা উপনিষদ বা বেদান্তের আলোচনা করছিল নিভৃতে বসে। কারণ গোবিন্দ ডানহাতে নিস্তারিণীর নিবিড়কৃষ্ণ কেশপাশ মুঠি বেঁধে ধরেচে, বাঁ হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কি বলছিল। নিস্তারিণী ঘাড় ঈষৎ হেলিয়ে ওর মুখের দিকে হাসি-হাসি মুখে চোখ তুলে চেয়ে ছিল।

২৫৩