পেছনে পায়ের শব্দ শুনে নিস্তারিণী মুখ ফিরিয়ে ওদের দেখে ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে গেল। গোবিন্দ বনের মধ্যে হঠাৎ কোথায় মিলিয়ে গেল। ভবানী বাঁড়ুয্যে পিছু হঠে চলে এলেন। নিস্তারিণী অপরাধীর মত মুখ নীচু করে রইল তিলুর সামনে। তিলু বনের দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললে—কে ওখানে চলে গেল রে? এখানে কি করচিস?
নিস্তারিণীর মুখ শুকিয়ে গিয়েচে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিয়েচে। এসে কোনো উত্তর দিলে না।
—কে গেল রে? বল্ না?
—গোবিন্দ
—তোর সঙ্গে কি?
নিস্তারিণী নিরুত্তর।
—আর বাড়ি থেকে এতখানি এসে এই জঙ্গলের মধ্যি-বা; রে মেয়ে!
—আমার ভালো লাগে।
নিস্তারিণী অত্যন্ত মৃদুস্বরে উত্তর দিলে।
তিলু রাগের সুরে বললে-মেরে হাড় ভেঙে দেবো, দুষ্ট মেয়ে কোথাকার! ভালো লাগাচ্চি তোমার? উনি এসেচেন নদীর ধারে এই বনের মধ্যি আধকোশ তফাত বাড়ি থেকে-কি, না ভালো লাগে আমার! সাপে খায় কি বাঘে খায়, তার ঠিক নেই! ধিঙ্গি মেয়ে, বলতি লজ্জা করে না? যা — বাড়ি যা-
ভবানী বাঁড়ুয্যে তিলুৱ ক্রোধব্যঞ্জক স্বর শুনে দূর থেকে বললেন - ওগো, চলে এসো না–
তিলু তার উত্তর দিলে-থামুন আপনি।
নিস্তারিণীর দিকে চেয়ে বললে-তোর একটু কাণ্ডজ্ঞান নেই, এখুনি যে গায়ে টি-টি পড়ে যাবে! মুখ দেখাবি কেমন করে, ও পোড়ারমুখী?
নিস্তারিণী নিঃশব্দে কাঁদিতে লাগলো।
—আয় আমার সঙ্গে-চল্-পোড়ারমুখী কোথাকার! গুণ কত? সে মুক্তোটা আছে, না এর মধ্যি গোবিন্দকে দিয়েচিস?
২৫৪