পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —ওমা, বল কি?

 —ঠিক বলচি। সেদিন আসচে। তোমাদের ওই বৌটিকে দিয়েই দেখলেো। দিনকাল বড্ড বদ্‌লাচ্চে।


 প্রসন্ন চক্কতি আজকাল গায়ামেমের দেখা বড় একটা পায় না। মেমসাহেব চলে যাওয়ার পরে গয়া একরকম স্থায়ীভাবেই বড় সাহেবের বাংলোয় বাস কৱচে। যদি বা বাইরে আসে, পথেঘাটে দেখা মেলে কখনো-সখনো, আগের মত যেন আর নেই। আবার কখনো কখনো আছেও। খামখেয়ালী গয়ামেমের কথা কিছু বলা যায় না। মন হোলো তো প্রসন্ন চক্কত্তির সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কত গল্পই করলে! খেয়াল না হোলো, ভালো কথাই বললে না। নীলকুঠির কাজ খুব মন্দা। নীলের চাষ ঠিকই হচ্চে বা হয়ে এসেচেও এতদিন। প্রজারা ঠিক আগের মতই মানে বড় সাহেবকে বা দেওয়ানকে। কিন্তু নীলের ব্যবসাতে মন্দা পড়েচে। মজুদ নীল বাইরের বাজারে আর তেমন কাটে না। দাম এত কম যে খরচ পোষায় না। আর বছরের অনেক নীল গুদামে মজুদ রয়েছে কাটতির অভাবে। নীলকুঠির চাকরিতে আর আগের মত জুত নেই, কিন্তু এরা এখন নতুন চাকরি পাবেই বা কোথায়। বড় সাহেৰ নীলকুঠি থেকে একটি লোককেও বরখাস্ত করে নি, মাইনেও ঠিক আগের মত দিয়ে যাচ্চে কিন্তু তেমন উপরি পাওনা নেই ততটা, হাঁকডাক কমে গিয়েচে, নীলকুঠির চাকরির সে জলুস অন্তর্হিতপ্রায়।

 শ্রীরাম মুচি একদিন প্রসন্ন চক্কত্তিকে বলেন-ও আমীনবাবু, আমার জমিটা আমাকে দিয়ে দিতি বলেন সায়েবকে।

 —বেলবো। সব চাকরদের জমি দিচ্চে নাকি?

 —বড় সায়েব বলেচে, ভজা, নফর আর আমাকে জমি দিতি। আপনি মেপে কুঠির খাস জমি থেকে তিন বিঘে ক’রে জমি এক এক জনকে দিয়ে দেবেন।

 —সায়েবের হুকুম পেলেই দেবো। আমরা পাবো না?

 —আপনি বলে নিতি পারেন সায়েবকে। শুধু চাকর-বাকরকে দেবে

২৫৮