পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ওর মুখের। কি হাসি! কচি ডুমুর গাছটা এখনো কতকাল বাঁচবে। প্রসন্ন চক্কত্তি আমীনের আজকার সুখের সাখী কুইল ওই গাছটা। প্রসন্ন আমীন মরে যাবে কিন্তু আজ দুপুরের ওই কচি-পাতা-ওঠা গাছটার ছায়ায় যাদের অপরূপ সুখের বার্তা লেখা হয়ে গেল, চাঁদের আলোয় যাদের চোখের জল চিকচিক করে, ফাল্গুন-দুপুরে গরম বাতাসে যাদের দীর্ঘশ্বাস ভেসে বেড়ায়-তাদের মনের সুখ-দুঃখের কথা পঞ্চাশ বছর পরে কেউ আর মনে রাখবে কি?


 মাস কয়েক পরের কথা।

 ভবনী ছেলেকে নিয়ে ইছামতীর ধারে বনসিমতলার ঘাটের বাঁকে বসে আছেন। বেলা তিন প্রহর এখনো হয় নি, ঘন বনজঙ্গলের ছায়ায় নিবিড় তীর ভূমি পানকৌড়ি আর বালিহাঁসের ডাকে মাঝে মাঝে মুখর হয়ে উঠচে। জেলেরা ডুব দিয়ে যে সব ঝিনুক আর জোংড়া তুলেছিল গত শীতকালে, তাদের স্তুূপ এখনো পড়ে আছে ডাঙায় এখানে ওখানে। বন্যলতা দুলচে জলের ওপর বাবলাগাছ ও বন্য যজ্ঞিডুমুর গাছ থেকে। কাকজঙ্ঘার থোলো থোলো রাঙা ফল সবুজ পাতার আড়াল থেকে উকি মারছে।

 ভবানী বললেন-খোকা, আমি যদি মারা যাই, মাদের তুই দেখবি?

 —না বাবা, আমি তাহলে কাঁদবো।

 —কাঁদবি কেন, আমার বয়েস হয়ে চে, আমি কতকাল বাঁচবো।

 —অনেকদিন।

 —তোর কথায় রে? পাগলা একটা-

 খোকা হি হি ক'রে হেসে উঠলো। তারপরেই বাবাকে এসে জড়িয় ধরলে ছোট্ট ছোট্ট দুটি হাত দিয়ে। বললে-আমার বাবা-

 —আমার কথা শোন। আমি মরে গেলে তুই দেখবি তোর মাদের?

 —না। আমি কাঁদবো তাহোলে-

 —বল দিকি ভগবান কে?

 —জানি নে।

২৬২