ভবানী বাঁডুয্যে অবাক হয়ে ছেলের মুখের দিকে তাকান।
কোথায় ছিল এ শিশু এতদিন?
বহুদূরের ও কোন অতীতের মোহ তার হৃদয়কে স্পর্শ করে। যে পৃথিৰী অতি পরিচিত, প্রতিদিন দৃষ্ট -যেখানে বসে ফণি চক্কত্তি সুদ করেন, চন্দ্র চাটুয্যের ছেলে জীবন চাটুয্যে সমাজপতিত্ব পাবার জন্যে দলাদলি করে-অজস্ৰ পাপ, ক্ষুদ্রতা ও লোভে যে পৃথিবী ক্লেদাক্ত -এ যেন সে পৃথিবী নয়। অত্যন্ত পরিচিত মনে হোলেও এ অত্যন্ত অপরিচিত, গভীর রহস্যময়। বিরাট বিশ্বযন্ত্রের লয় সঙ্গতির একটা মনোমুগ্ধকর তান।
পিছনকার বাতাস আকন্দ ফুলের গন্ধে ভরপুর। স্তব্ধ নীল শূন্য যেন যেন অনন্তের ধ্যানে মগ্ন।
আজকার এই যে সঙ্গীত, জীবজগতের এই পবিত্র অনাহত ধ্বনি আজ যে সব কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত হচ্চে পাঁচশত কি হাজার বছর পরে সে সব কণ্ঠ কোথায় মিলিয়ে যাবে! ইছামতীর জলের স্রোতে নতুন ইতিহাস লেখা হবে কালের বুকে।
আজ এই যে ক্ষুদ্র বালক ও পিতা অপরাত্নে নদীর ধারে বসে আছে, কত স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা ওদের মধ্যে-সে কথা কেউ জানবে না।
কেবল থাকবেন তিনি। সমস্ত পরিবর্তনের মধ্যে অপরিবর্তনীয়, সমস্ত গতির মধ্যে স্থিতিশীল তিনি। ঈশ্বর ব্রহ্ম, জ্যোতিঃস্বৰূপ এ মানুষের মন-গড়া কথা। সেই জিনিস যা এমন সুন্দৰ; অপরাহে, ফুল-ফলে, বসন্তে, লক্ষ-লক্ষ জন্মমৃত্যুতে, আশায়, স্নেহে, দয়ায়, প্রেমে আবছায়া আবছায়া ধরা পড়ে, জগতের কোনো ধর্মশাস্ত্রে সেই জিনিসের স্বরূপ কি তা বলতে পারে নি; কোনো ঋষি, মুনি, সাধু যদি বা অনুভব করতে পেরেও থাকেন, মুখে প্রকাশ করতে পারেন নি...কি সে জিনিস তা কে বলবে?
তবু মনে হয় তিনি যত বড় হোন, আমাদের সগোত্র। আমার মনের সঙ্গে, এই শিশুর মনের সঙ্গে সেই বিরাট মনের কোথায় যেন যোগ আছে। ভগবান যে আমাকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তা নয়—আমি তাঁর আত্মীয়-খুব আপন ও নিকটতম সম্পর্কের আত্মীয়। কোটি কোটি তারার দ্যুতিতে দ্যুতিমান সে
২৬৫