পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —তুমি শোও। আমি আসচি ওঘর থেকে-

 —ও বাবা, আয়, তাহলে আমি কাঁদবো-

 ভবানীর ভালো লাগে বড় এই শিশুকে। এখনো দু’বছর পোরেনি, কেমন সব কথা বলে এবং কি মিষ্টি সুরে, অপূর্ব ভঙ্গিতেই না বলে!   শিশুর প্রতি গাড় মমতাৱসে ভবানীর প্রাণ সিক্ত হোলো। তিনি ওর পাশে শুয়ে পড়লেন। শিশু ভবানীর গলা জড়িয়ে ধরে বল্লে-আমার বড়দা, আমার বড়দা-

 —সে কি রে?

 —আমার বড়দা-

 —আমি বুঝি তোর বড়দা? বেশ বেশ।

 শ্বশুরবাড়ির গ্রামে বাস করার দরুণ এ গায়ের ছেলেমেয়েদের এবং অধিকাংশ লোকেরই তিনি ভগ্নিপতি সম্পর্কের লোক। তঁরা অনেকেই তাঁকে 'বড়দা’কেউবা 'মেজদা’ বলে ডাকে। শিশু সেটা শুনে শুনে যদি ঠাউরে নেয়, যে লোকটাকে বাবা বলা হয়, তার অন্য নাম কিন্তু ‘বড়দা’, তবে তাকে দোষ দেওয়া চলে না।

 ভবানী ওকে আদর করে বললেন-খোকন, আমার খোকন-

 —আমার বড়দা-

 ভবানীর তখুনি মনে হোলো এ এক অপূর্ব প্রেমের রূপ দেখতে পাচ্চেন এই ক্ষুদ্র মানবকের হৃদয়রাজ্যে। এত আপন তাঁকে এত অল্পদিনে কেউ করে নিতে পারে নি, এত নির্বিচারে, এত নিঃসঙ্কোচে। আপনি আর পরে তফাতই এই।

 তিনি বললেন-তোকে একটা গল্প করি খোকন, একটা জুজুবুড়ি আছে ওই তালগাছে-কুলোর মত তার কান, মূলোর মত-

 এই পর্যন্ত বলতেই খোকা তাড়াতাড়ি দু’হাত দিয়ে তঁকে জড়িয়ে ধরে বললে

 —আমার ভয় করবে-আমার ভয় করবে-তাহলে আমি কাঁদবো।—

 —তুমি কাঁদবে?

 一হ্যাঁ।

 —আচ্ছা থাক থাক।

২৭৩