পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —আর বলিস নো-খোকন, আর বলিস নে-

 一হি হি-

 —বড্ড ভয় করচে-খোকন আমায় ভয় দেখিও না-

 —আমার বড়দা, আমার বড়দা-

 আজ সন্ধ্যাবেলায় শ্যাম গাঙ্গুলীর মান রাখতে গিয়ে খোকাকে বড় অবহেলা করেচেন তিনি।


 গ্রামে একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে গেল। নালু পাল বেশী অর্থবান হয়ে উঠলো। সামান্য মুদীখানার দোকান থেকে ইদানীং অবিশ্যি সে বড় গোলদারী দোকান খুলেছিল এবং ধান, সর্ষে, মুগাকলাইয়ের আড়ত ফেঁদে মোকাম ও গঞ্জ থেকে মাল কেনাবেচা করত।

 একদিন ফণি চক্কত্তির চণ্ডীমণ্ডপে সংবাদটা নিয়ে এলেন দীনু ভট্চাজ। ৺শিবসত্য চক্রবর্তীর আমলে তৈরী সেই প্রাচীন চণ্ডীমণ্ডপ দা-কাটা তামাকের ধোঁয়ায় অন্ধকারপ্রায় হয়ে গিয়েচে। পল্লীগ্রামের ব্রাহ্মণের দল সবাই নিষ্কর্মা, জীবনে মহকুমার বাইরে কেউ কখনো পা দেয় নি -কারণ দরকারও হয় না, ব্রহ্মোত্তর সম্পত্তি প্রায় সব ব্রাহ্মণেরই আছে, ধানের গোলা প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই, দু’পাঁচটা গরু ও আছে,আম কাঁটাল বাঁশঝাড় আছে। সুতরাং সকালসন্দে ফণি চক্কত্তি, ৺চন্দর চাটুয্যে কিংবা শ্যাম গাঙ্গুলীর চণ্ডীমণ্ডপে এই সব অলস, নিষ্কর্মা গ্রাম্য ব্রাহ্মণদের সময় কাটাবার জন্যে তামাকু সেবন, পাশা, দাবা, আজগুবী গল্প, দুর্বলের বিরুদ্ধে সামাজিক ঘোঁট ইত্যাদি পুরোমাত্রায় চলে। মাঝে মাঝে এর ওর ঘাড় ভেঙে খাওয়া চলে কোনো সমাজবিরুদ্ধ কাজের জরিমানা স্বরূপ।

 সুতরাং দীনু ভট্চাজ যখন চোখ বড় বড় ক’রে এসে বললে—শুনেচ হে আমাদেব নালু পালের কাণ্ড?

 সকলে আগ্রহের সুরে এগিয়ে এসে বললে-কি, কি হে শুনি?

 —সতীশ কলু আর নালু পাল তামাক কিনে মোটা টাকা লাভ করেচে, দু'দশ নয়, অনেক বেশি। দশ বিশ হাজার!

২৭৫