সকলে বিস্ময়ের সুরে বলে উঠলো।—সে কি? সে কি?
দীনু ভট্চাজ বললেন-অনেকদিন থেকে ওরা তলায় তলায় কেনাবেচা করচে মোকামের মাল। এবার ধারে ভজনঘাট মোকাম থেকে এক কিস্তি মাল রপ্তানি দেয় কলকাতায়। সতীশ কলুর শালা বড় আড়তদারি করে ওই ভজনঘাটেই। তারই পরামর্শে এটা ঘটেচে। নয়তো এরা কি জানে, কি বোঝে? ব্যস, তাতেই লাল।
ফণি চক্কত্তি বললেন, হ্যাঁ, আমিও শুনিচি; ও সব কথা নয়। সতীশ কলুর শালা-টালা কিছু না। নালু পালের শ্বশুরের অবস্থা বাইরে একরকম ভেতরে একরকম। সে-ই টাকাটা ধার দিয়েচে।
হরি নাপিত সকলকে কামাতে এসেছিল, সে গ্রাম্য নাপিত, সকালে এখানে এলে সবাইকে একত্র পাওয়া যায় বলে বারের কামানোর দিন সে এখানেই আসে। এসেই কামায় না, তামাক খায়। সে কল্কে খেতে খেতে নামিয়ে বললে-না, খুড়োমশাই। বিনোদ প্রামাণিকের অবস্থা ভালো না, আমি জানি। আড়তদারি করে ছোটখাটো, অতি পয়সা ক'নে পাবে?
—তলায় তলায় তার টাকা আছে। জামাইকে ভালোবাসে, তার ওই এক মেয়ে। টাকাটা যে কোরেই হোক, যোগাড় ক’রে দিয়েচে জামাইকে। টাকা না হলি ব্যবসা চলে?
জিনিসটার কোনো মীমাংস হোক আর না হোক নালু পাল যে অর্থবান হয়ে উঠেচে, ছ’মাস এক বছরের মধ্যে সেটা জানা গেল ভালোভাবে যখন সে মস্ত বড় ধানচালের সায়ের বসালে পটপটিতলার ঘাটে। জমিদারের কাছে ঘাট ইজারা নিয়ে ধান ও সর্ষের মরসুমে দশ-বিশখানা মহাজনী কিস্তি রোজ তার সায়েরে এসে মাল নামিয়ে উঠিয়ে কেনাবেচা করে। দুজন কয়াল জিনিস মাপতে হিমশিম খেয়ে যায়। অন্তত পঁচিশ হাজার টাকা সে মুনাফা করলে এই এক মরসুমে পটপটিতলার সায়ের থেকে। লোকজন, মুহুরী, গোমস্তা রাখলে, মুদীখানা দোকান বড় গোলদারী দোকানে পরিণত করলে, পাশে একখানা কাপড়ের দোকানও খুললে।
২৭৬