বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কোন্ জায়গা থেকে। আমার মুহুরী বলছিল।

 —দেখেচ?

 —কলকাতায় গেলাম কবে যে দেখবো?

 —চলো এবার দেখে আসবা।

 —ভয় করে। শুনিচি নাকি বেজায় চোর-জুয়োচোরের দেশ।

 —আমার সঙ্গে যাবা। তোমরা টাকার লোক, তোমাদের ভাবনা কি, ভাল বাঙালী সরাইখানায় ঘরভাড়া করে দেবো। জীবনে অমন কখনো দেখবা না আর। কাবুল-যুদ্ধে জিতে সরকার থেকে উৎসব হচ্চে।


 এইভাবে নালু পাল ও তার স্ত্রী তুলসী উৎসব দেখতে কলকাতা রওনা হোলো। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার যথেষ্ট আপত্তি উঠেছিল নালু পালের পরিবারে। সাহেবরা খৃষ্টান করে দেয় সেখানে নিয়ে গেলে গোমাংস খাইয়ে। আরও কত কি। শম্ভু রায় এ গ্রামের একমাত্র ব্যক্তি যে কলকাতার হালচাল সম্বন্ধে অভিজ্ঞ। সে সকলকে বুঝিয়ে ওদের সঙ্গে নিয়ে গেল।

 কলকাতায় এসে কালীঘাটে ছোট্ট খোলার ঘর ভাড়া করলে ওরা, ভাড়াটা কিছু বেশি, দিন এক আনা। আদিগঙ্গায় স্নান করে জোড়া পাঁঠ দিয়ে সোনার বেলপাতা দিয়ে পূজো দিলে তুলসী।

 সাত দিন কলকাতায় ছিল, রোজ গঙ্গাস্নান করতো, মন্দিরে পূজো দিত।

 তারপর কলকাতার বাড়িঘর, গাড়িঘোড়া-তার কি বর্ণনা দেবে নালু আর তুলসী? চারঘোড়ার গাড়ি ক'রে বড় বড় লোক গড়ের মাঠে হাওয়া খেতে আসে, তাদের বড় বড় বাগানবাড়ি কলকাতার উপকণ্ঠে, শনি রবিবারে নাকি বাইনাচ হয় প্রত্যেক বাগানবাড়িতে। এক-একখানা খাবারের দোকান কি! অত সব খাবার চক্ষেও দেখে নি ওরা। লোকের ভিড় কি বড় রাস্তায়, যেদিন গড়ের মাঠে আতসবাজি পোড়ানো হোলো! সায়েবেরা বেত হাতে ক'রে সামনের লোকদের মারতে মারতে নিজেরা বীরদৰ্পে চলে যাচ্ছে। ভয়ে লোকজন পথ ছেড়ে দিচ্চে, তুলসীর গায়েও এক

২৮১