পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —মা-রা ভালো?

 —হুঁ।

 খোকা ভালো?

 —ভালো। পাঠশালায় গিয়েছে। সে এখানে আসতে চায়।

 —এবার নিয়ে আসবেন।

 —নিশ্চয় আনবো।

 —আচ্ছা, আপনার কেমন লাগে, রূপ না অরূপ?

 —ও সব বড় বড় কথা বাদ দাও, খেপী। আমি সামান্য সংসারী লোক। যদি বলতে হয় তবে আমার গুরুভাই চৈতন্য ভারতীর কাছে শুনো।

 —একটু বলতি হবে পশ্চিমির কথা। সেই বিষ্টির দিন বলেছিলেন, বড় ভালো লেগেছিলো।

 ভবানী বাড়ুয্যে এখানে মাঝে মাঝে প্রায়ই আসেন। দ্বারিক কর্মকার এখানকার এক ভক্ত, সম্প্রতি সে একখান চালাঘর তৈরি করে দিয়েচে, সমবেত ভক্তবৃন্দর গাঁজা সেবনের সুবিধার জন্যে। এখানকার আর একজন ভক্ত হাফেজ মণ্ডল নিজে খেটেখুটে ঘরখানা উঠিয়েচে, খড় বাঁশ দড়ির খরচ দিয়েছে দ্বারিক কর্মকার। ওরা সন্দের সময় রোজ এসে জড়ো হয়, গাঁজার ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায় অশথ্‌তলা। ভবানী বাড়ুয্যে এলে সমীহ করে সবাই, গাঁজা সামনে কেউ খায় না।

 ভবানী বললেন-শালবনের মধ্যে নদী বয়ে যাচ্চে, ওপরে পাহাড়, পাহাড়ে আমলকীর গাছ, বেলগাছ। দুটো একটা নয়, অনেক। আমার গুরুদেব শুধু আমলকী বেল আর আতা খেয়ে থাকতেন। অনেকদিনের কথা হয়ে গেল দেখতে দেখতে। তোমাদের দেশে এসেছি আজ প্রায় বারো-চোদ্দ বছর হয়ে গেল। বয়েস হোলো ষাট-বাষট্টি। খোকার মা তখন ছিল ত্রিশ, এখন চুয়াল্লিশ। দিন চলে যাচ্ছে জলের মত। কত কি ঘটে গেল আমি আসবার পরে। কিন্তু এখনো মনে হয় গুরুদেব বেঁচে আছেন এবং এখনো সকাল সন্দে ধ্যানস্থ থাকেন সেই আমলকীতলায়।

২৯১