দেরি হোল বাড়ি ফিরতে, সুতরাং ভবানী নিজের ঘরটিতে ঢুকে দেখলেন তিলু দোরের চৌকাঠে কি একটা নেকড়া দিয়ে পুঁছচে। ভবানী বললেন— কি ওখানে?
তিলু মুখ না তুলেই বললে—রেড়ির তেল পড়ে গেল, পিদিমটা ভাঙলো, জল পড়লো মেজেতে।
এ-সময়ে সমস্ত পল্লীগ্রামে দোতলা প্রদীপ বা সেজ ব্যবহার হোত— তলায় জল থাকতো, ওপরের তলায় তেল। এতে নাকি তেল কম পুড়তো। ভবানী দেখলেন তাঁর খাটের তলায় দোতলা পিদিমটা ছিট্কে ভেঙে পড়ে আছে।
—সবই আনাড়ি। ভাঙলে তো পিদিমটা?
—আমি ভাঙিনি।
—কে? নিলু বুঝি?
—আজ্ঞে মশাই, না। চুপ করুন। কথা বলবো না আপনার সঙ্গে।
—কেন, কি করিচি?
—কি করিচি, বটে! আমার কথা শোনা হোল? সন্দের সময় এসে জল খেতে বলেছিলুম না?
—শোনো, আসবো কি, এক মজা হয়েচে, বলি। কি বিপদে পড়ে গিয়েছিলাম যে!
তিলু কৌতুহলের দৃষ্টিতে স্বামীর মুখের দিকে চেয়ে বললে—কি বিপদ? সাপ-টাপ তাড়া করেনি তো? খড়ের মাঠে বডড কেউটে সাপের ভয়—
—না গো। সাপ নয়, এক পাগলা সায়েব। টম্টমের সইস বললে নীলকুঠির সায়েবদের বন্ধু, দেশ থেকে বেড়াতে এসেচে। আমি বটতলায় বসে আছি, আমার সামনে এসে হাঁ করে দাঁড়িয়েছে। কি সব হিট্ মিট্ টিট্ বলতে লাগলো। সইসটা বললে—আপনার ছবি আঁকবে—
—ও, সেই ছবি-আঁকিয়ে সাহেব! হ্যাঁ হ্যাঁ, দাদার মুখে শুনিচি বটে।