বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —আমাকে?

 —অবাক হয়ে গেলেন যে! পুরুষ জাতকে বিশ্বাস নেই। কখন কোন্ দিকে চলেন আপনারা। শুনুন, আপনার ওপর সত্যিই ওর খুব ছেদ্দা। ও বলে, দিদি, আপনার মত স্বামী পাওয়া কত ভাগ্যির কথা। যদি বলি বুড়ো, তবে যা চটে যায়। বলে, কোথায় বুড়ো? উনি বুড়ো বই কি! ঠাকুরজামাইয়ের মত লোক যুবদের মধ্যি ক'টা বেরোয় দ্যাখাও না?...এই সব বলে-হি হি-ওর আপনার ওপর সোহাগ হোলো নাকি? আপনাকে দেখতিই আসে এ বাড়ি।

 —ছিঃ, ওকথা বলতে নেই, আমার মেয়ের বয়সী না?

 —সে তো আমরাও আপনার মেয়ের বয়সী; তাতে কি? ওর কিন্তু ঠিক-আপনার ওপর-

 —যাক সে। শোনো, খোকা কোথায়?

 —এই খানিকটা আগে খেলে এল। শুয়ে পড়েছে। কি বই পড়ছিল। আমাকে কেবল বলছিল, মা, আমি বাবার সঙ্গে খেতি বসবো। আমি বললাম, আপনার ফিরতি অনেক রাত হবে। জায়গা করি?

 —করো—কিন্তু সন্দে-আহ্নিকটা একবার করে নেবো। নিলুকে ডাকো-


 নীলমণি সমাদ্দার পড়ে গিয়েছেন বিপদে। সংসার অচল হয়ে পড়েচে। তিন আনা দর উঠে গিয়েছে এক কাঠা চালের। তার একজন বড় মুরুব্বী ছিলেন দেওয়ান রাজারম। রাজামের খুন হয়ে যাওয়ার পরে নীলমণি বড় বেকায়দায় পড়ে গিয়েছেন। রাজারামদাদা লোক বড় ভালো ছিল না, কুটবুদ্ধি, সাহেবের তাঁবেদার। তাই করতে গিয়েই মারাও পড়লো। আজকাল একথা সবাই জানে এ অঞ্চলে, শ্যাম বাগ্‌দীর মেয়ে কুসুমকে তিনি বড় সাহেবের হাতে সমর্পণ করতে গিয়েছিলেন রাতে চুপিচুপি ওকে ভুলিয়ে-টুলিয়ে ধাপ্পা-ধুপ্পি দিয়ে। কুসুমকে তার বাবা ওঁর বাড়ি রেখে যায় তার চরিত্র শোধরাবার জন্যে। বড় সাহেব কিন্তু কুসুমকে ফেরত দিয়েছিল, ঘরে ঢুকতেও দ্যায় নি। রাজারামকে বলেছিল-এখন সময় অন্যরকম, প্রজাদের মধ্যে গোলমাল দেখা দিয়েচে, এখন কোনো

২৯৮