পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কিছু ছুতো পেলে তারা চটে যাবে, গবর্নমেণ্ট চটে যাবে, নতুন ম্যাজিস্ট্রেট নীলকর সাহেবদের ভালো চোখে দেখে না, একে নিয়ে চলে যাও। কে আনতে বলেছিল একে?

 রাজারাম চলে আসেন। কুসুম কিন্তু সে কথা তার আত্মীয়-স্বজনের কাছে প্রকাশ করে দেয়-সেজন্যে বাগদী ও দুলে প্রজারা ভয়ানক চটে যায় দেওয়ান রাজারামের ওপর। রাজারাম যে বাগদিদের দলের হাতেই প্রাণ দিলেন, এও তার একট প্রধান কারণ।

 গ্রামে কোনো কথা চাপা থাকে না। এসব কথা এখন সকলেই জানে বা শুনেচে। নীলমণি সমাদ্দার শুনেছেন কানসোনার বাগ্‌দিরা এ অঞ্চলের ওদের সমাজের প্রধান। তারাই একজোট হয়ে সেই রাতে রাজারামকে খুন করে। বড় সাহেব যে কুসুমকে গ্রহণ না করে ফেরত দিয়েছিল, একথাও সবাই জেনেছিল সে সময়। সাধারণের শ্রদ্ধা আকর্ষণও করেছিল সেজন্যে বড় সাহেব। যাক সে সব কথা। এখন কথা হচ্ছে, নীলমণি সমাদ্দার করেন কি? স্ত্রী আন্নাকালী দুবেলা খোঁচাচ্চেন-চাল নেই ঘরে। কাল ভাত হবে না, যা হয় করো, আমি কথা বলে খালাস।

 দুপুরের পর নীলমণি সমাদ্দার সেই কানসোনা গ্রামেই গেলেন। সেই অনেকদিন আগে কুঠির দাঙ্গায় নিহত রামু বাগ্‌দির বাড়ি। রামু বাগদির ছেলে হারু পাটের দড়ি পাকাচ্ছিল কাঁটালতলায় বসে। আজকাল হারুর অবস্থা ভালো, বাড়িতে দুটো ধানের গোলা, একগাদা বিচুলি।

 হারু উঠে এসে নীলমণি সমাদ্দারকে অভ্যর্থনা করলে। নীলমণি যেন অকূলে কুল পেলেন হারুকে পেয়ে। বললেন-বাবা হারু, একটু তামাক খাওয়া দিকি।

 হারু তামাক সেজে নিয়ে এসে কলার পাতায় কল্কে বসিয়ে খেতে দিলে। বললে ইদিকি কনে এয়েলেন!

 ততক্ষণে নীলমণি সমাদ্দার মনে মনে একটা মতলব ঠাউরে ফেলেচেন। বললেন-তোমার কাছেই।

২৯৯