পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 প্রশ্নটি বড় অদ্ভুত লাগলো ভবানীর। বললেন—তোমার বয়েস হয়েছে বৌমা, খুব ছেলেমানুষ নও, তুমিই বোঝো, যা ভাবা যায় তা কি করা উচিত? খারাপ কাজও তো করতে পারো।

 —পাপ হয়?

 —হয়।

 —তবে আর করবো না, আপনি যখন বলচেন তখন সেটাই ঠিক।

 —তুমি বুদ্ধিমতী, আমি কী তোমাকে বলবো!

 —আপনি যা বলবেন, আমার কাছে তাই খুব বড় ঠাকুরজামাই। আমি অন্য পথে পা দিতি দিতি চলে এ্যালাম শুধু দিদি আর আপনার পরামর্শে। আপনি যা বলবেন, আমার দুঃখ হলিও তাই করতি হবে, সুখ হলিও তাই করতি হবে, আমার গুরু আপনি।

 —আমি কারো গুরু-ফুরু নই বৌমা। ওসব বাজে কথা।

 —আপনি দো-ভাজা চিঁড়ে খাবেন নারকেলকোরা দিয়ে? কাল এনে দেবো। নতুন চিঁড়ে কুটিচি।

 —এনো বৌমা।

 এই সময়ে খোকা খেলা করে বাড়ি ফিরে এল। মাকে বললে—মা নদীতে যাবে না?

 ওর মা বললে—তুই কোথায় ছিলি এতক্ষণ?

 —কপাটি খেলছিলাম হাবুদের বাড়ি। চলো যাই। আমি ছুটে এলাম সেই জন্যি। এসে ইংরিজি পড়বো। পড়তি শিখে গিইচি।

 প্রায়ই সন্ধ্যার আগে ভবানী দুই স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে নদীর ঘাটে যান। সকলেই সাঁতার দেয়, গা হাত পা ধোয়। তারপর ভগবানের উপাসনা করে। খোকা এই নদীতে গিয়ে স্নান ও উপাসনা এত ভালোবাসে, যে প্রতি বিকেলে মাদের ও বাবাকে ওই নিয়ে যায় তাগাদা দিয়ে। আজও সে গেল ওঁদের নিয়ে, উপরন্তু গেল নিস্তারিণী। সে নাছোড়বান্দা হয়ে পড়লো, তাকে নিয়ে যেতেই হবে।

৩১০