ভবানী নিয়ে যেতে চান না বাইরের কোন তৃতীয় ব্যক্তিকে, তিনি অস্বস্তি বোধ করেন। ভগবানের উপাসনা এক হয় নিভৃতে, নতুবা হয় সমধর্মী মানুষদের সঙ্গে। তিলু বিশেষ করে তাঁকে অনুরোধ করলে নিস্তারিণীর জন্যে।
সকলে স্নান শেষ করলে। শেষ সূর্যের রাঙা আলো পড়েচে ওপারের কাশবনে, সাঁইবাবলা ঝোপের মাথায়, জলচর পক্ষীরা ডানায় রক্ত-সূর্যের শেষ আলোর আবির মাখিয়ে পশ্চিমদিকের কোনো বিল-বাঁওড়ের দিকে চলেচে—সম্ভবতঃ নাকাশিপাড়ার নিচে সামটার বিলের উদ্দেশে।
ভবানী বললেন—বৌমা, এদের দেখাদেখি হাত জোড় কর—তারপর মনে মনে বা মুখে বলো—কিংবা শুধু শুনে যাও।
ওঁ যো দেবা অগ্নৌ যে অপ্সু, যো বিশ্বং ভুবনং আবিবেশ।
যঃ ওষধিষু যো বনস্পতিষূ, দেবায় তস্মৈ নমোনমঃ।
যিনি অগ্নিতে, যিনি জলেতে
যিনি শোভনীয় ক্ষিতিতলেতে
যিনি তৃণতরু ফুলফলেতে
তাঁহারে নমস্কার।
যিনি অন্তরে যিনি বাহিরে
যিনি যে দিকে যখন চাহিরে
তাহারে নমস্কার।
খোকাও তার মা-বাবার সঙ্গে সুললিত কণ্ঠে এই মন্ত্রটি গাইলে।
তারপর ভবানী বাঁড়ুয্যে বললেন—খোকা, এই পৃথিবী কে সৃষ্টি করেচে?
খোকা নামতার অঙ্ক মুখস্থ বলবার সুরে বললে—ভগবান।
—তিনি কোথায় থাকেন?
—সব জায়গায়, বাবা।
—আকাশেও?
—সব জায়গায়।
—কথা বলেন?