পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —আমিও যাবো।

 —তোর বাড়িতে কেউ বকবে না?

 —বকলে তো বয়েই গেল। আমি যাবো ঠিক।

 —চলো। ফিরতি কিন্তু অনেক রাত হবে বলে দিচ্চি।

 —তোমাদের সঙ্গে গেলি কেউ কিছু বলবে না। বললিও আমার তাতে কলা। ওসব মানিনে আমি।

 অগত্যা ওকে সঙ্গে নিতেই হোলো। রামকানাইয়ের বাড়ি পৌঁছে সবাই মাদুর পেতে বসলো। রামকানাই রেড়ির তেলের দোতলা পিদিম জ্বালালেন। তারপর হাত-পা ধুয়ে এসে বসে সন্ধ্যাহ্নিক করলেন। ওদের বললেন—একটু কিছু খেতি হবে—কিছুই নেই, দুটো চালভাজা। মা লক্ষ্মীরা মেখে নেবে না, আমি দেবো?

 সামান্য জলযোগ শেষ হোলে রামকানাই নিজে চৈতন্যচরিতামৃত পড়লেন এক অধ্যায়। গীতাপাঠ করলেন ভবানী। একখানা হাতের লেখা পুঁথি জলচৌকির ওপর সযত্নে রক্ষিত দেখে ভবানী বললেন—ওটা কিসের পুঁথি? ভাগবত?

 —না, ওখানা মাধবনিদান। আমার গুরুদেবের নিজের হাতে নকল-করা পুঁথি। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রডা যে জানতি চায়, তাকে মাধবনিদান আগে পড়তি হবে। বিজয় রক্ষিত কত টীকাসমেত পুঁথি ওখানা। বিজয় রক্ষিতের টীকা দুষ্প্রাপ্য। আমার ছাত্র নিমাইকে পড়াই। সে ক’দিন আসচে না, জ্বর হয়েচে।

 পুঁথিখানা রামকানাই ভবানীর সামনে মেলে ধরলেন। মুক্তোর মত হাতের লেখা পঞ্চাশ-ষাট বছর আগেকার তুলট কাগজের পাতায় এখনো যেন জ্বলজ্বল করচে। পুঁথির শেষের দিকে সেকেলে শ্যামাসঙ্গীত। এগুলি বোধ হয় গুরুদেব ৺মহানন্দ কবিরাজ স্বয়ং লিখেছিলেন। ভবানীর অনুরোধে তা থেকে একটা গান গাইলেন রামকানাই খুব খারাপ গলায়—

ন্যাংটা মেয়ের এত আদর জটে ব্যাটা তো বাড়ালে
নইলে কি আর এত করে ডেকে মরি জয় কালী বলে।

 তারপর ভবানীও গাইলেন একখানা কবি দাশরথি রায়ের বিখ্যাত গানঃ—

৩১৪