নিস্তারিণী বলে উঠলো—ও দিদি, কে আসচে দ্যাখো—
ভবানী বললেন-বড্ড নির্জন জায়গাটা। দাঁড়াও সবাই একটু—
লোকটার হাতে একখানা লাঠি। সে ওদের দিকে তাক করেই আসচে, এটা বেশ বোঝা গেল। সকলেরই ভয় হয়েচে তখন লোকটার গতিক দেখে। খুব কাছে এসে পড়েচে সে তখন, নিস্তারিণী বলে উঠলো—ও দিদি, খোকার হাত ধরো—ঠাকুরজামাই, এগোবেন না—
লোকটা ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো। পরক্ষণেই ওদের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখেই বিস্ময় ও আনন্দের সুরে বলে উঠলো—এ কি! দিদিমণি? ঠাকুরমশায় যে! এই যে খোকা…
তিলুও ততক্ষণে লোকটাকে চিনেচে। বলে উঠলো—হলা দাদা? তুমি কোত্থেকে?
হলা পেকে কি যেন একটা ভাব গোপন করে ফেললে সঙ্গে সঙ্গে। ইতস্ততঃ করে বললে—ওই যাতিছেলাম চরপাড়ায়—মোর—এই-তো। দাঁড়ান সবাই। পায়ের ধুলো দ্যান একটুখানি।
হলা পেকের কিন্তু সে চেহারা নেই। মাথার চুল সাদা হয়ে গিয়েচে কিছু কিছু, আগের তুলনায় বুড়ো হয়ে পড়েচে। তিলু বললে—এতকাল কোথায় ছিলে হলা দাদা? কতকাল দেখি নি!
হলা পেকে বললে—সরকারের জেলে।
—আবার জেলে কেন?
—হবিবপুরের বিশ্বাসদের বাড়ি ডাকাতি হয়েল, ফাঁড়ির দারোগা মোরে আর আঘোর মুচিকে ধরে নিয়ে গেল, বললে তোমরা করেচ।
—কর নি তুমি সে ডাকাতি? কর নি?
হলা পেকে চুপ করে রইল। তিলু ছাড়বার পাত্রী নয়, বললে—তুমি নিদ্দুষী?
—না। করেলাম।
—অঘোর দাদা কোথায়?
—জেলে মরে গিয়েচে।