-একটা কথা বলবো?
—কি?
—আজ কি মনে করে লাঠি হাতে আমাদের দিকি আসছিলে এই মাঠের মধ্যি? ঠিক কথা বলো? যদি আমরা না হোতাম?
হলা পেকে নিরুত্তর।
তিলু মোলায়েম সুরে বললে—হলা দাদা—
—কি দিদি?
—চলো আমাদের বাড়ি। এসো আমাদের সঙ্গে।
হলা পেকে যেন ব্যস্তসমস্ত হয়ে উঠে বললে—না, এখন আর যাবো না দিদি। তোমার পায়ের ধুলোর যুগ্যি নই মুই। মরে গেলি মনে রাখবা তো দাদা বলে?
খোকার কাছে এসে বললে—এই যে, ওমা, এসো আমার খোকা ঠাকুর, আমার চাঁদের ঠাকুর, আমার সোনার ঠাকুর, কত বড়ডা হয়েচে? আর যে চিনা যায় না। বেঁচে থাকো, আহা, বেঁচে থাকো—নেকাপড়া শেখো বাবার মত—
খোকাকে আবেগভরে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করলে হলা পেকে। তারপর আর কোনো কিছু না বলে কারো দিকে না তাকিয়ে মাঠের দিকে হন্হন্ ক’রে যেতে যেতে জ্যোৎস্নার মধ্যে মিলিয়ে গেল। খোকা বিস্ময়ের সুরে বললে—ও কে বাবা? আমি তো দেখি নি কখনো। আমায় আদর করলে কেন?
নিস্তারিণীর বুক তখনো যেন ঢিপ ঢিপ করছিল। সে বুঝতে পেরেছে, ব্যাপারটা। সবাই বুঝতে পেরেছে।
নিস্তারিণী বললে—বাবাঃ, যদি আমরা না হতাম। জনপ্রাণী নেই, মাঠের মধ্যি—
সকলে আবার রওনা হোলো বাড়ির দিকে। কাঠঠোকরা ডাকচে আমজামের বনে। বনমরচের ঘন ঝোপে জোনাকি জ্বলচে। বড় শিমূল গাছটায় বাদুড়ের দল ডানা ঝটাপট করচে। দু’চারটে নক্ষত্র এখানে ওখানে দেখা যাচ্চে জ্যোৎস্নাভরা আকাশে। ভবানী বাঁড়ুয্যে ভাবছিলেন আর একটা কথা।