পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —গরুর গাড়িতি।

 —কেন, কুঠির পাল্কী আছে, তাই পাঠাবো এখন।

 আজ দু’বছর হোলো বেঙ্গল ইণ্ডিগো কোম্পানী সাড়ে এগারো হাজার টাকায় তাদের কর্মকর্তা ইনিস্‌ সাহেবের মধ্যস্থতায় মোল্লাহাটির কুঠি লালমোহন পাল ও সতীশ সাধুখাঁর কাছে বিক্রি করে ফেলেচে। শিপ্‌টনের মৃত্যুর পরে ইনিস্‌ সাহেব এই দু’বছর কুঠি চালিয়েছিল, শেষে ইনিস্ সাহেবই রিপোর্ট করে দিলে এ কুঠি রাখা আর লাভজনক নয়। নীলকুঠির খাস জমি দেড়শো বিঘেতে আজকাল চাষ হয় এবং কুঠির প্রাঙ্গণের প্রায় তেরো বিঘে জমিতে আম, কাঁটাল, পেয়ারা প্রভৃতির চারা লাগানো হয়েচে। অর্থাৎ কৃষিকার্যই হচ্ছে আজকাল প্রধান কাজ নীলকুঠির। চাষটা বজায় আছে এই পর্যন্ত। দেওয়ান হরকালী সুর এবং নরহরি পেশ্‌কার এই দুজন মাত্র আছেন পুরনো কর্মচারীদের মধ্যে, সব কাজকর্ম দেখাশুনো করেন। প্রসন্ন চক্কত্তি আমীন এবং অন্যান্য কর্মচারীর জবাব হয়ে গিয়েচে। নীলকুঠির বড় বড় বাংলা ঘর ক-খানার সবগুলিই আসবাবপত্র সমেত এখনো বজায় আছে। না রেখে উপায় নেই —ইণ্ডিগো কোম্পানী এগুলি সুদ্ধ বিক্রি করেচে এবং দামও ধরে নিয়েচে। অবিশ্যি জলের দামে বিক্রি হয়েচে সন্দেহ নেই। এ অজ পল্লীগ্রামে অত বড় কুঠিবাড়ি ও শৌখীন আসবাবপত্রের ক্রেতা কে? গাড়ি করে বয়ে অন্যত্র নিয়ে যাবার খরচও কম নয়, তার হাঙ্গামাও যথেষ্ট। ইণ্ডিগো কোম্পানীর অবস্থা এদিকে টলমল, যা পাওয়া গেল তাই লাভ। ইনিস সাহেব কেবল যাবার সময় দুটো বড় আলমারি কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিল।

 দেওয়ান হরকালী সুর বাড়ি এসে বুঝিয়েছিলেন—খাসজমি আছে দেড়শো বিঘে, একশো বিয়াল্লিশ বিঘে ন’ কাটা সাত ছটাক, ঐ দেড়শো বিঘেই ধরুন। ওটবন্দি জমা বন্দোবস্ত নেওয়া আছে সত্তর বিঘে। তা ছাড়া নওয়াদার বিল ইজারা নেওয়া হয়েছিল ম্যাকনিল্‌ সাহেবের আমলে নাটোর রাজাদের কাছ থেকে। মোটা জলকর। চোখ বুজে কুঠি কিনে নিন পাল মশায়, নীলকুঠি হিসেবে নয়, জমিদারি হিসেবে কিনে নিন, জমিদারি আমি দেখাশুনা করবো, আরও দু’একটি পুরনো কর্মচারী আপনাকে বজায় রাখতে হবে, আমরাই সব

৩১৯