পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চালাবো, আপনি লাভের কড়ি আমাদের কাছ থেকে বুঝে নেবেন।

 লালমোহন পাল বলেছিল—কুঠিবাড়ি আসবাবপত্তর সমেত?

 —বিলকুল।

 —যান, নেবো।

 এইভাবে কুঠি কেনা হয়। কেনার সময় ইনিস সাহেব একটু গোলমাল বাধিয়েছিল, ঘোড়ার গাড়ি দু’খানা ও দু’জোড়া ঘোড়া দেবে না। এ নিয়ে লালমোহন পালের দিক থেকে আপত্তি ওঠে, অবশেষে আর সামান্য কিছু বেশি দিতে হয়। কুঠি কেনার পরে রায়গঞ্জের গোসাঁইবাবুদের কাছে গাড়িঘোড়াগুলো প্রায় হাজার টাকায় বিক্রি করে ফেলা হয়। খাসজমি ও জলকর ভালোভাবে দেখাশুনো করলে যে মোটা মুনাফা থাকবে, এটা দেওয়ান হরকালী বুঝেছিলেন। সামান্য জমিতে নীলের চাষও হয়।

 কুঠি কেনার পরে তুলসী একদিন বলেছিল—দেওয়ানমশাইকে বলো না গো, সায়েবের ঘোড়ার টমটম গাড়ি আমাদের পাঠিয়ে দেবেন, একদিন চড়বো!

 লালমোহন বলেছিলেন—না বড়বৌ। বড় সায়েব এ টম্‌টমে চড়ে বেড়াত, তখন আমরা মোট মাথায় ছুটে পালাতাম ধানের ক্ষেতি। সেই টম্‌টমে তুমি চড়লি লোকে বলবে কি জানো? বলবে ট্যাকা হয়েচে কিনা, তাই বড় অংখার হয়েচে। আমারেও একদিন দেওয়ান বলেছিলেন—টম্‌টম্‌ পাঠিয়ে দেবো, কুঠিতি আসবেন। আমি হাতজোড় ক’রে বলেলাম—মাপ করবেন। ওসব নবাবী করুক গিয়ে বাবুভেয়েরা। আমরা ব্যবসাদার জাত, ওসব করলি ব্যবসা ছিকেয় উঠবে।

 অবশেষে একদিন একখানা ছইওয়ালা গরুর গাড়িতে লালমোহনের বড় মেয়ে সরস্বতী, তার মা তুলসী, বোন ময়না ছেলেপিলে নিয়ে কুঠি দেখতে গেল। দেওয়ান হরকালী, প্রসন্ন আমীন ও নরহরি পেশ্‌কার এদের এগিয়ে নিয়ে এসে সব দেখিয়ে নিয়ে বেড়ানো। সবাই নানারকম প্রশ্ন করতে লাগলো—

 —ও দেওয়ান কাকা, এ ঘরটা কি?

৩২০