রাত্রে খেটেখুটে এসে লালমোহন পাল পশ্চিম দিকের চারচালা বড় ঘরে কাঁঠালকাঠের তক্তাপোশে শুয়েচে, তুলসী ডিবেভর্তি পান এনে শিয়রের বালিশের কাছে রেখে দিয়ে বললে—কুঠি দেখে এ্যালাম আজ।
লালমোহন পাল একটু অন্যমনস্ক, আড়াইশো ছালা গাছতামাকের বায়না করা হয়েছিল ভাজনঘাট মোকামে, মালটা এখনো এসে পৌঁছোয় নি, একটু ভাবনায় পড়েচে সে। তুলসী উত্তর না পেয়ে বলে—কি ভাবচো?
—কিছু না।
—ব্যবসার কথা ঠিক!
—ধরো তাই।
—আজ কুঠি দেখতি গিয়েছিলাম, দেখে এ্যালাম।
—কি দেখলে?
—বাবাঃ, সে কত কি! তুমি দেখেছ গা?
—আমি? আমার বলে মরবার ফুর্সুৎ নেই, আমি যাবো কুঠির জিনিস দেখতি! পাগল আছো বড়বৌ, আমরা হচ্ছি ব্যবসাদার লোক, শখ-শৌখিনতা আমাদের জন্যি না। এই দ্যাখো, ভাজনঘাটের তামাক আসি নি, ভাবচি
—হ্যাঁগা, আমার একটা সাধ রাখবা?
তুলসী ন’বছরের মেয়ের মত অবদারের সুরে কথা শেষ ক’রে হাসি-হাসি মুখে স্বামীর কাছে এগিয়ে এল।
লালমোহন পাল বিরক্তির সুরে বললে—কি?
অভিমানের সুরে তুলসী বললে—রাগ করলে গা? তবে বলবো নি।
—বলোই না ছাই!
—না।
—লক্ষ্মি দিদি আমার, বলো বলো—
—ওমা আমার কি হবে! তিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকেচে, ও আবার কি কথা! অমন বলতি আছে? ব্যবসা ক’রে টাকা আনতিই শিখেচো, ভদ্দরলোকের কথাও শেখো নি, ভদ্দরলোকের রীতনীত কিছুই জানো না।