পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বামুন।

 তুলসী ধীর সুরে বললে—দ্যাখো। একটা কথা বলি। অমন যা-তা কথা মুখে এনো না। আজ দুটো টাকা হয়েচে বলে অতটা বাড়িও না।

 লালমোহন পাল বললে—কি আর বাড়ালাম আমি? আমি তোমাকে বললাম, নীলকুঠির কাজ আমি কি বুঝি! দেওয়ান যা করেন, তার ওপর তোমার আমার কথা বলা তো উচিত নয়। তুমি মেয়েমানুষ, কি বোঝো এ সবের? কাজের দস্তুর এই।

 —বেশ, কাজ তুমি দ্যাও আর না দ্যাও গিয়ে—যা-তা বলতি নেই লোককে। ওতে লোকে ভাবে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে, আজ তাই বড্‌ড অংখার। ছিঃ—

 তুলসী রাগ ক’রে অপ্রসন্ন মূখে উঠে চলে গেল।

 এ হোলো বছর দুই আগের কথা। তারপর প্রসন্ন চক্কত্তি আমীন কোথায় চলে গেল এতকালের কাছাড়ী ছেড়ে। উপায়ও ছিল না। হরকালী সুর কর্মচারী ছাঁটাই করেছিলেন জমিদারের ব্যয়সঙ্কোচ করবার জন্যে। কে, কোথায় ছড়িয়ে পড়লো তার ঠিক ছিল না। ভজা মুচি সহিস ও বেয়ারা শ্রীরাম মুচির চাকরি গেলে চাষবাষ করতো। এ বছর শ্রাবণ মাসে মোল্লাহাটির হাট থেকে ফেরবার পথে অন্ধকারে ওকে সাপে কামড়ায়, তাতেই সে মারা যায়।

 নীলকুঠির বড় সাহেবের বাংলোর সামনে আজকাল লালমোহন পালের ধানের খামার। খাস জমি দেড়শো বিঘের ধান সেখানে পৌষ মাসে ঝাড়া হয়, বিচালির আঁটি গাদাবন্দি হয়, যে বড় বারান্দাতে সাহেবরা ছোট হাজরি খেতো সেখানে ধান-ঝাড়াই কৃষাণ এবং জনমজুরেরা বসে দা-কাটা তামাক খায় আর বলাবলি করে—সুমুন্দির সায়েবগুলো এই ঠানটায় বসে কত মুরগির গোস্ত ধুনেছে আর ইঞ্জিরি বলেচে! ইদিকি কোনো লোকের ঢোকবার হুকুম ছেলো না—আর আজ সেখানডাতে বসে ওই দ্যাখো রজবালি দাদ চুলকোচ্ছে।…

 বিকেলবেলা খোকাকে নিয়ে ভবানী বাঁড়ুয্যে গেলেন রামকানাই কবিরাজের

৩২৪