পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বলে চীৎকার করলে কি হবে? কি চমৎকার মুক্তি!

 —আচ্ছা ভগবান কি আমাদের প্রেম চান বাঁড়ুয্যেমশাই। আপনার কি মনে হয়?

 —আজকাল যেন বুঝতে পারি কিছু কিছু। ভগবান প্রেম চান, এটাও মনে হয়। আগে বুঝতাম না। জ্ঞানের ওপরে খুব জোর দিতাম। এখন মনে হয় তিনি আমার বাবা। তাঁর বংশে আমাদের জন্ম। সেই রক্ত গায়ে আছে আমাদের। কখনো কোনো কারণে তিনি আমাদের অকল্যাণের পথে ঠেলে দেবেন না, দিতে পারেন না। তিনি বিজ্ঞ বাবার মতো আমাদের হাত ধরে নিয়ে যাবেন। তিনি যে আমাদের বহু বিজ্ঞ, বহু প্রাচীন, বহু অভিজ্ঞ, বই জ্ঞানী, বহু শক্তিময় বাবা। আমরা তাঁর নিতান্ত অবোধ, কুসংস্কারগ্রস্ত, ভীরু, অসহায় ছেলে। জেনেশুনে কি আমাদের অমঙ্গলের পথে ঠেলে দিতে পারেন? তা কখনও হয়?

 বামকানাই উৎসাহের সঙ্গে বলে উঠলেন—বাঃ, বাঃ—

 ভবানী বাঁড়ুয্যে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন, যেন পরের কথাটা বলতে ইতস্ততঃ করছেন। তারপরে বলেই ফেললেন কথাটা। বললেন—এ আমার নিজের অনুভূতির কথা কবিরাজ মশাই। আগে এসব বুঝতাম না, বলেচি আপনাকে। আসল কথা কি জানেন, অপরের মুখে হাজারো কথার চেয়ে নিজের মনের মধ্যে খুঁজে পাওয়া এককণা সত্যের দাম অনেক বেশি। নিজে বাবা হয়ে, খোকা জন্মবার পরে তবে ভগবানের পিতৃরূপ নিজের মনে বুঝলাম ভালো ক’রে। এতদিন পিতার মন কি জিনিস কি ক’রে জানবো বলুন!

 রামকানাই কবিরাজ হেসে বললেন—তাহলি দাঁড়াচ্চে এই, খোকা আপনার এক গুরু?

 —যা বলেন। কে গুরু নয় বলতে পারেন? যার কাছে যা শেখা যায়, সেখানে সে আমার গুরু। তিনি তো সকলের মধ্যেই। একটা গানের মধ্যে আছে না—

জনকরূপেতে জন্মাই সন্তান
জননী হইয়া করি স্তনদান

৩২৮