পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

খোঁজখবর নিত। আকাট নিষ্ঠুর সংসারে এই আর একজন যে তার মুখের দিকে চাইতো। অবহেলা হেনস্থ করেচে তাকে একদিন গয়া। আজ নীরির মুখের দোক্তাতামাকের কড়া গন্ধ শুকতে শুঁকতে কেবলই মনটা হু-হু করচে সেই কথা মনে হয়ে। আজ তিনিও নেই।

 কবিরাজ ঠাকুরের এখানে এসে তবু যেন খানিকটা শান্তি পাওয়া যাচ্চে অনেকদিন পরে। কারা যেন কথা বলে এখানে। সে কথা কখনো শোনে নি। মনে নতুন ভরসা জাগে।


 তুলসী সকালে উঠে ছেলেমেয়েদের দুটো মুড়ি আর নারিকেলনাডু খেতে দিলে। ঝি এসে বললে—মা, বড় গোয়াল এখন ঝাঁটপস্কার করবো, না থাকবে?

 —এখন থাক গো। দুধ দোওয়া না হলি, গরু বের না হলি গোয়াল পুঁছে লাভ নেই। আবার যা তাই হবে।

 ময়না এখানে এসেছে আজ দু’মাস। তার ছোট ছেলেটার বড় অসুখ। রামকানাই কবিরাজকে দেখাবার জন্যেই ময়না এখানে এসে আছে ছেলেপুলে নিয়ে। ময়নার বিয়ে অবস্থাপন্ন ঘরে দিতে পারে নি লালমোহন, তখন তার অবস্থা ভালো ছিল না। সেজন্যে ময়নাকে প্রায়ই এখানে নিয়ে আসে। দাদার বাড়িতে দু’দিন ভালো খাবে পরবে। তুলসী ভালো মেয়ে বলেই আরও এসব সম্ভব হয়েচে বেশি করে। ময়না বেশি দিন না এলে তুলসী স্বামীকে তাগাদা দেয়—হ্যাঁগা, হিম হয়ে বসে আছ (এ কথাটা সে খুব বেশি ব্যবহার করে) যে! ময়না ঠাকুরঝি সেই কবে গিয়েচে, মা-বাপই না হয় মারা গিয়েচে, তুমি দাদা তো আছ—মাও তত বেশি দিন মারা যান নি, ওকে নিয়ে এসে গিয়ে।

 ময়নার মা মারা গিয়েছিলেন—তখন নালুর গোলাবাড়ি, দোকান ও আড়ত হয়েচে, তবে এমন বড় মহাজন হয়ে ওঠে নি। নালু পালের একটা দুঃখ আছে মনে, মা এসব কিছু দেখে গেলেন না। তুলসী এখানে এনে ময়নাকে আরো বেশি করে যত্ন ক’রে, শাশুড়ীর ভাগটাও যেন ওকে দিয়ে দেয়। বরং ময়না খুব

৩৩৬