বিরাজের বাপের বাড়ি নদে শান্তিপুরের কাছে বাঘআঁচড়া গ্রামে। সুতরাং তার বুলি যশোর জেলার মত নয়, সেটা সে খুব ভালো ক’রে জাহির করতে চায় এ অজ বাঙলাদেশের ঝি-বৌদির কাছে। ওর সঙ্গে তিলু নিলু দুই বোনই গেল ঘরে শেকল তুলে দিয়ে।
এ পাড়ায় ইছামতীতে মাত্র দুটি নাইবার ঘাট, একটার নাম রায়পাড়ার ঘাট, আর একটার নাম সায়েবের ঘাট। কিছুদূরে বাঁকের মুখে বনসিমতলার ঘাট। পাড়া থেকে দূরে বলে বনসিমতলার ঘাটে মেয়েরা আদৌ আসে না, যদিও সবগুলো ঘাটের চেয়ে তীরতরুশ্রেণী এখানে বেশি নিবিড়,ধরার অরুণোদয় এখানে অবাচ্য সৌন্দর্য ও মহিমায় ভরা, বনবিহঙ্গকাকলী এখানে সুস্বরা, কত ধরনের যে বনফুল ফোটে ঋতুতে ঋতুতে এর তীরের বনে বনে, ঝোপে ঝোপে! চাঁড়াগাছের তলায় কী ছায়াভরা কুঞ্জবিতান, পঞ্চাশ-ষাট বছরের মোটা চাঁড়াগাছ এখানে খুঁজলে দু’চারটে মিলে যায়।
তিলু বললে—চল না, বনসিমতলার ঘাটে নাইতে যাই—
বিরাজ বললে—এই অবেলায়?
—কদ্দুর আর!
—যেতুম ভাই, কিন্তু শাশুড়ী বাড়ি নেই, দুটি ডাল ভেঙে উঠোনে রোদে দিয়ে গ্যাছেন, তুলে আসতে ভুলে গেলুম আসবার সময়। গোরু-বাছুরে খেয়ে ফেললে আমাকে বুঝি আস্ত রাখবেন ভেবেচ!
নিলু বললে—ও সব কিচ্ছু শুনচি নে। যেতেই হবে বনসিমতলার ঘাটে। চলো।
বিরাজ হেসে সুন্দর চোখ দুটি তেরচা ক’রে কটাক্ষ হেনে বললে—কেন, কোনো নাগর সেখানে ওৎ পেতে আছে বুঝি?
তিলু বললে—আমাদের বুড়োবয়সে আর নাগর কি থাকবে ভাই, ওসব তোদের কাঁচা বয়সের কাণ্ড। একটা ছেড়ে ঘাটে ঘাটে তোদর নাগর থাকতি পারে।
—ইস! এখনো ওই বয়সের রূপ দেখলে অনেক যুবোর মুণ্ডু ঘুরে যাবে