একথা বলতে পারি দিদি। চলো, দেখি কোন্ ঘাটে নিয়ে যাবে। নাগরের চক্ষু ছানাবড়া ক’রে দিয়ে আসি।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত রায়পাড়ার ঘাটেই ওদের যেতে হোলো, পথে নামবার পরে অনেক ঝি-বৌ ওদের ধরে নিয়ে গেল। ঘাটে অনেক বৌ, হাসির ঢেউ উঠচে, গরম দিনের শেষে ঠাণ্ডা নদীজলের আমেজ লেগেচে সকলের গায়ে, জলকেলি শেষ ক’রে সুন্দরী বধূ-কন্যার দল কেউ ডাঙায় উঠতে চায় না।
সীতানাথ রায়ের পুত্রবধূ হিমি ডেকে বললে—ও বড়দি, দেখি নি যে কদ্দিন!
তিলু বললে—এ ঘাটে আর আসি নে—
—কেন? কোন ঘাটে যান তবে?
বিরাজ বললে—তোরা খবর দিস তোদের লুকোনো নাগরালির? ও কেন বলবে ওর নিজের? আমি তো বলতুম না!
হিমি বললে—বড়দিদির বয়েসটা আমার মা’র বয়সী। ওকথা আর ওঁকে বোলো না। তোমার মুখ সুন্দর, বয়েস কচি, ওসব তোমাদের কাজ। ওতে কি?
—এতে ভাই খোল। গা-টায় ময়লা হয়েচে, ক্ষারখোল মাখবো বলে নিয়ে এলুম। মাখবি?
না। তুমি সুন্দরী, তুমি ওসব মাখো।
সবাই খিল খিল ক’রে হেসে উঠলো। এতগুলি তরুণীর হাসির লহরে, কথাবার্তার ঝিলিকে স্নানের ঘাট মুখর হয়ে উঠেছে, আর কিছু পরে সপ্তমীর চাঁদ উঠবে ঘাটের ওপরকার শিরীষ আর পুয়ো গাছের মাথায়। পটপটি গাছের ফুল ঝরে পড়চে জলের ওপর, বিরাজের মনে কেমন একটা অদ্ভুত আনন্দের ভাব এল, যেন এ সংসারে দুঃখ নেই, কষ্ট নেই, তার রূপের প্রশংসা সব স্থানে শোনা যাবে, বড় পিঁড়িখানা এয়োস্ত্রী সমাজে তার জন্যেই পাতা থাকবে সর্বত্র। ফেনি বাতাসার থালা থাকা তার দিকে এগিয়ে ধরবে সবাই চিরকাল, কোন কুয়াশা-ছাড়া পাখী-ডাকা ভোরে শাঁখ বাজিয়ে ডালা সাজিয়ে জল সইতে বেরুবে তার খোকার অন্নপ্রাশনে কি বিয়ে-পৈতেতে, শান্তিপুরী শাড়ী