পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পরে সে ফুলের সাজি আর তেলহলুদের কাঁসার বাটি নিয়ে ঝমর ঝমর মল বাজিয়ে, গুজরীপঞ্চম আর পৈঁছে পরে সেজেগুজে চলবে এয়োস্ত্রীদের আগে আগে…আরও কত কি, কত কি মনে আসে…মনের খুশিতে সে টুপ টুপ ক’রে ডুব দেয়, একবার ডুব দিয়ে উঠে সে যেন সামনের চরের প্রান্তে উদার আকাশের কোণে দেখতে পেলে তার মায়ের হাসিমুখ, আর একবার দেখলে বিয়ের ফুলশয্যার রাতে ছোবা খেলা করতে করতে উনি আড়চোখে তার দিকে চেয়েছিলেন, সেই সলজ্জ, সসঙ্কোচ হাসি মুখখানা।…

 জীবনে শুধু সুখ! শুধু আনন্দ! শুধু খাওয়া-দাওয়া, জলকেলি, হাসিখুশি, কদম্বকেলি, তাস নিয়ে বিন্তি খেলার ধুম! হি হি হি—কি মজা!

 —হ্যাঁরে, ওকি ও বিরাজদিদি, অবহেলায় তুই জলে ডুব দিচ্ছিস্‌ কি মনে ক’রে?

 অবাক হয়ে হিমি বললে কথাটা।

 নিলু বললে—তাই তো, দ্যাখ বড়দি কাণ্ড। হ্যাঁরে চুল ভিজুলি যে, ওই চুলভার রাশ শুকুবে? কি আক্কেল তোর?

 বিরাজের গ্রাহ্য নেই ওদের কথার দিকে। সে নিজের ভাবে নিজে বিভোরা, বললে—এই। একটা গান গাইবো শুনবি?

মনের বাসনা তোরে সবিশেষ শোন রে বলি—

 হিমি বললে—ওরে চুপ, কে যেন আসচে—ভারিক্কি দলের কেউ—

 নিস্তারিণী গুল দিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে ঘাটের ওপর এসে হাজির হোলো। সবাই একসঙ্গে তাকে দেখলে তাকিয়ে, কিন্তু কেউ কথা বললে না। এ গাঁয়ের ঝি-বৌদের অনেকেই ওর সঙ্গে কথা বলে না, ওর সম্বন্ধে নানারকম কথা রটনা আছে পাড়ায় পাড়ায়। কেউ কিছু দেখে নি, বলতে পারে না, তবুও ওর পাড়ার রাস্তা দিয়ে একা একা বেরুনো, যার তার সঙ্গে (মেয়েমানুষদের মধ্যে) কথা বলা—এ সব নিয়ে ঘরে-ঘরে কথা হয়েচে। এই সব জন্যেই কেউ ওর সঙ্গে হঠাৎ কথা বলতে চায় না সাহস করে পাছে ওর সঙ্গে কথা কইলে কেউ খারাপ বলে।

৩৪৩