বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তাই আছে। সেখানে পীরের দরগা বা মসজিদ আছে কি না ওকেই জিগ্যেস করুন না। আছে সেখানে তোমাদের দরগা?

 —ছেল আগে। এখন নেই দেওয়ানবাবু।

 —তবে? তবে যে বডড মিথ্যে কথা বললে সাহেবকে?

 —বাবু, আপনি একটু দয়া করুন, ও জমিতি মোরা হাজৎ করি। অঘ্রাণ মাসের সংক্রাস্তির দিন পীরের নামে রেঁধে বেড়ে খাই। হয়-না-হয় আপনি একদিন দেখে আসবেন। মুই মিথ্যে কথা কেন বলবো আপনারে, আপনারা হলেন দেশের রাজা। আমার জমিটা ছেড়ে দ্যান। দয়া করে।

 ছোট সাহেব রাজারামের দিকে চেয়ে সুপারিশের সুরে বললে-যাক গে, দা ও ছেড়ে জমিটা। ওরা কি যে করে বলচে

 নবু গাজি বললে-হাজৎ।

 —সেটা কি আবার?

 —ওই যে বললাম সায়েব, খোদার নামে ভাত গোস্ত রেঁধে ফকির মিচিকিনিদের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে যা থাকে মোরা সবাই মেলে খাই।

 ছোট সাহেব খুশি হয়ে বলে উঠলো- বেশ, বেশ। আমারে একদিন দেখাতি হবে।

 —তা দেখাবো সাহেব।

 —বেশ। রাজারাম, ওর জমিটা ছেড়ে দিও। যাও-

 নবু গাজি আভূমি সেলাম করে চলে গেল। কিন্তু সে বোকা লোক নয়, দেওয়ান রাজারামকে সে ভালো ভাবেই চেনে। বাইরে গিয়ে গাছের আড়ালে অপেক্ষা করতে লাগলো।

 রাজারাম ছোট সাহেবকে বললেন-হুজুর, আপনি কাজ মাটি করলেন একেবারে।

 —কেন?

 —ও জমি এক নম্বরের জমি। বিঘেতে সাড়ে তিনমণ গুড়ো পড়তা হবে। ও জমি ছেড়ে দিতে আছে? আর আপনি যদি আমন করে আস্কারা দ্যান

৩২