পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 কত বেগুন এ সময়ে দিয়ে যেতে প্রজারা। বেগুন, ঝিঙে, নতুন মুলো। শুধু তাকে নয়, সব আমলাই পেতে। নরহরি পেশকার তাকে সব তার পাওনা জিনিস দিয়ে বলতো,—প্রসন্নদা, আপনি হোলেন ব্রাহ্মণ মানুষ। রান্নাতা আপনাদের বংশগত জিনিস। আমার দুটো ভাত আপনি রেঁধে রাখবেন দাদা।

 সুবিধে ছিল। একটা লোকের জন্যে রাঁধতেও যা, দুজন লোকের রাঁধতেও প্রায় সেই খরচ, টাকা তিন-চার পড়তো দুজনের মাসিক খরচ। নরহরি চাল ডাল সবি যোগাতো। চমৎকার খাঁটি দুধটুকু পাওয়া যেতো, এ ও দিয়ে যেতো, পয়সা দিয়ে বড় একটা হয় নি জিনিস কিনতে। আহা, গয়ার কথা মনে পড়ে।

 গয়া!…গয়ামেম!

 না। তার কথা ভাবলেই কেন তার মন ওরকম খারাপ হয়ে যায়? গয়ামেম তার দিকে ভালো চোখে তাকিয়েছিল। দুঃখের তো পারাপার নেই জীবনে, ছেলেবেলা থেকেই দুঃখের পেছনে ধোঁয়া দিতে দিতে জীবনটা কেটে গেল। কেউ কখনো হেসে কথা বলে নি, মিষ্টি গলায় কেউ কখনো ডাকে নি। গয়া কেবল সেই সাধটা পূর্ণ করেছিল জীবনের। অমন সুঠাম সুন্দরী, একরাশ কালো চুল। বড়সায়েবের আদরিণী আয়া গয়ামেম তার মত লোকের দিকে যে কেন ভালো চোখে চাইবে—এর কোন হেতু খুঁজে মেলে? তবু সে চেয়েছিল।

 কেমন মিষ্টি গলায় ডাকতো—খুড়োমশাই, অ খুড়োমশাই—

 বয়েসে সে বুড়ো ওর তুলনায়। তবু তো গয়া তাকে তাচ্ছিল্য করে নি। কেন করে নি? কেন ছলছুতো খুঁজে তার সঙ্গে গয়া হাসিমস্করা করতো, কেন তাকে প্রশয় দিত? কেন অমন ভাবে সুন্দর হাসি হাসতো তার দিকে চেয়ে? কেন তাকে নাচিয়ে ও অমন আনন্দ পেতে? আজকাল গয়া কেমন আছে? কতকাল দেখা হয় নি। বড় কষ্টে পড়েচে হয়তো, কে জানে? কত দিন রাত্রে মন-কেমন করে ওর জন্যে। অনেক কাল দেখা হয় নি।

 —ও আমীনমশাই, মাছ প্যালাম না—

 রতিলালের মাছের খাড়ুই হাতে প্রবেশ। সর্বশরীর জ্বলে গেল প্রসন্ন চক্কত্তির। আ মোলো যা, আমি তোমার এয়ার, তোমার দরের লোক? ব্যাটা জলটানা

৩৬১