পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কোঁচার মুড়ো গায়ে দিয়ে ফরাসে বসেছিলেন আধময়লা একটা গির্দে হেলান দিয়ে। রূপো বাঁধানো ফর্সিতে তামাক দিয়ে গেল রতিলাল নাপিত।

 আমীনের দিকে চেয়ে বললেন—খাসমহলের চিঠা তৈরি করেচেন?

 —প্রায় সব হয়েচে। সামান্য কিছু বাকি।

 —ওদের দিতি পারবেন? যাও, তোমরা আমীনমশাইয়ের কাছে যাও। এদের একটু দেখে দেবেন তো চিঠাগুলো। দূর থেকে এসেচে সব, আজই চলে যাবে।

 প্রসন্ন চক্কত্তি বহুকাল এই কাজ করে এসেচে, গুড়ের কলসীর কোন্‌ দিকে সার গুড় থাকে আর কোন্‌ দিকে ঝোলাগুড় থাকে, তাকে সেটা দেখাতে হবে না। খাসমহলের চিঠা তৈরি থাকলেই কি আর সব গোলমাল মিটে যায়? সীমানা সরহদ্দ নিয়ে গোলমাল থাকে, অনেক কিছু গোলমাল থাকে, চিঠাতে নায়েবের সই করাতে হবে—অনেক কিছু হাঙ্গামা। এখন অবেলায় অত শত কাজ কি হয়ে উঠবে? বলা যায় না। চেষ্টা করে অবিশ্যি দেখা যাক।

 নীলকুঠির দিনে এমন সব ব্যাপারে দু’পয়সা আসতো। সে সব অনেক দিনের কথা হোলো। এখন যেন মনে হয় সব স্বপ্ন।

 প্রজাদের তরফ থেকে একজন লোক এগিয়ে এসে বললে—করে দ্যান আমীনবাবু! আপনারে পান খেতি কিছু দেব এখন—

 —কিছু কত?

 —এক আনা করে মাথা পিছু দেবো এখন।

 প্রসন্ন চক্কত্তি হাতের খেরো বাঁধা দপ্তর নামিয়ে রেখে বললে—তাহলি এখন হবে না। তোমার নায়েব মশাইকে গিয়ে বলতি পারো। চিঠে তৈরি হয়েচে বটে, এখনো সাবেক রেকর্ডের সঙ্গে মেলানো হয় নি, সই হয় নি। এখনো দশ পনেরো দিন কি মাস খানেক বিলম্ব। চিঠে তৈরি থাকলিই কাজ ফতে হয় না। অনেক কাঠ খড় পোড়াতি হয়।

 প্রজাদের মোড়ল বিনীত ভাবে বললে—আপনি কত বলেচো আমীনবাবু?

৩৬৪