আর মরবার তারিখ সায়েবের, মনে আছে না? কত নুনতা খেয়েছেন এক সময়। দ্যান, দুটো উলুখড়ের ফুলও দ্যান তুলে টাটকা। দ্যান ওই সঙ্গে—
প্রসন্ন চক্কত্তি দেখলে ওর দু’গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়েচে নতুন করে।
তারপর দুজনে কবরখানার ঝোপজঙ্গল থেকে বার হয়ে একটা বিলিতি গাছের তলায় গিয়ে বসলো। খানিকক্ষণ কারো মুখে কথা নেই। দুজনেই দুজনকে অপ্রত্যাশিতভাবে দেখে বেজায় খুশি যে হয়েচে সেটা ওদের মুখের ভাবে পরিস্ফুট। কত যুগ আগেকার পাষাণ-পুরীর ভিত্তির গাত্রে উৎকীর্ণ কোন্ অতীত সভ্যতার দুটি নায়ক-নায়িকা যেন জীবন্ত হয়ে উঠেচে আজ এই সন্ধ্যারাত্রে মোল্লাহাটির পোড়ো নীলকুঠিতে রবসন্ সাহেবের আনীত প্রাচীন জুনিপার গাছটার তলায়। গয়া রোগা হয়ে গিয়েচে, সে চেহারা নেই। সামনের দাঁত পড়ে গিয়েছে। বুড়ো হয়ে আসচে। দুঃখের দিনের ছাপ ওর মুখে, সারা অঙ্গে, চোখের চাউনিতে, মুখের ম্লান হাসিতে।
ওর মুখের দিকে চেয়ে চুপ করে রইল গয়া।
—কেমন আছ গয়া?
—ভালো আছি। আপনি কনে থেকে? আজকাল আছেন কনে?
—আছি অনেক দূর। বাহাদুরপুরি। কাছারীতে আমীনি করি। তুমি কেমন আছ তাই আগে কও শুনি। চেহারা এমন খারাপ হোলো কেন?
—আর চেহারার কথা বলবেন না। খেতি পেতাম না যদি সায়েব সেই জমির বিলি না করে দিত আর আপনি মেপে না দেতেন। যদ্দিন সময় ভালো ছেল, আমারে দিয়ে কাজ আদায় করে নেবে বুঝতো, তদ্দিন লোকে মানতো, আদর করতো। এখন আমারে পুঁছবে কেডা? উল্টে আরো হেনস্থা করে, এক-ঘরে করে রেখেচে পাড়ায়—সেবার তো আপনারে বলিচি।
—এখনো তাই চলচে?
—যদ্দিন বাঁচবো, এর সুরাহা হবে ভাবচেন খুড়োমশাই? আমার জাত গিয়েচে যে! একটি জল কেউ দেয় না অসুখে পড়ে থাকলি, কেউ উঁকি মেরে