পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হাতে পালিশ আর রং করেচেন। টেবিলের একাধারে মোট চামড়া-বঁধানে একরাশ খাতা। দেওয়ালে অনেকগুলো সাহেব-মেমের ছবি। এই ঘরের এক কোণে ফায়ার-প্লেস, তেমন শীত না পড়লেও কাঠের মোটা মোটা ডালের আগুন মাঘের শেষ পর্যন্ত জলে।

 বড় সাহেব চোখ তুলে দেয়ালের দিকে চেয়ে বললেন-গুড, মর্ণিং।

 রাজারাম পূর্বে একবার সেলাম করেছেন, তখন সাহেব দেখতে পাননি। ভেবে আর একবার লম্বা সেলাম করলেন। জিভ শুকিয়ে আসচে তার। ছোট সাহেবের মত দিলখোলা লোক নয় ইনি। মেজাজ বেজায় গম্ভীর, দুর্দান্ত বলেও খ্যাতি যথেষ্ট। না-জানি কখন কি করে বসে। সাহেবসুবো লোককে কখনো বিশ্বাস করতে নেই। ভালো ছিল সেই ছবি আঁকিয়ে পাগল সাহেবটা। তিলুর ও ভবানী ভায়ার ছবি একেছিল লুকিয়ে। যাবার সময় সেই কথার উল্লেখ করে রাজারাম পাগলা সাহেবটার কাছে পচিশ টাকা বকশিশ আদায় করেও নিয়েছিলেন। অবিশি ভবানী তার কিছু জানে না। যেমন সেই পাগলা সাহেব, তেমনি ভবানী, দুই-ই সমান। আপনি খেয়াল মত চলে দুজনেই।

 রাজারাম বললেন-আপনার আশীৰ্বাদে হুজুর ভালোই আছি।

 —কি ডরকার আছে এখানে? বিশেষ কোনো কাজ আছে? আমি এখন খুব বিজী আছি। সময় কম আছে।

 —অন্য কিছু না হুজুর; আমি তেঘরার একটা প্রজার জমিতে দাগ মেরেছিলাম, ছোট সাহেব তাকে মাপ করে দিয়েচেন।

 শিপটন ভ্র কুঞ্চিত করে বললেন-যা হুকুম ডিয়াছেন, টাহাই হইবে। ইহাটে টোমার কি অমান্য আছে।

 বড় সাহেব এমন উল্টোপাল্টা কথা বলে, ভালো বাংলা না জানার দরুন। ভালো বালাই সব! রাজারামের হয়েছে মহাপাপ, এই সব অদ্ভূত চীজ নিয়ে ঘর করা। সাহেবের ভুল সংশোধন করে দেওয়া চলবে না, চটে যাবে। বালাইয়ের দল যা বলে তাই সই। তিনি বললেন-আজ্ঞে না, অন্যায় আর কি আছে?

৩৪