—কারকুন গিয়েছিল নীলির দাগ মারাতি-তারা দাগ মারাতি দেয়নি, লাঠি নিয়ে তাড়া করেচে-
—এতবড় আস্পদ্দা তাদের?
—তুমি ঘোড়া আনতি বলে। চলো দুজনে ঘোড়া ক’রে সেখানে যাবে। বড় সাহেবকে কিছু ব’লো না এখন।
—যাদি সত্যি হয় তখন কি করা যাবে সে আমাকে বলতি হবে না। সায়েব। আপনি দয়া ক’রে শুধু ফজদুরি মামলা থেকে আমারে বাঁচাবেন।
— না না, তুমি বডড rash, কিছু করে বসবা। ওই জন্যি তোমারে আমার বিশ্বেস হয় না।
একটু পরে দুটো ঘোড়ায় চড়ে দুজনে বেরিয়ে গেল। কখন দেওয়ান ফিরে এসেছিলেন কেউ জানে না। পরদিন সকালে চারিধারে খবর রটে গেল রাত্রে রাহাতুনপুর গ্রাম একেবারে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে গিয়েচে। বড় বড় চাষীদের গ্রাম, কারো বাড়ি বিশ-ত্রিশটা পর্যন্ত ধানের গোলা ছিল-আর ছিল ছ’চালা আটচালা ঘর, সব পুড়ে নি:শেষ হয়ে গিয়েচে। কি ভাবে আগুন লেগেছিল। কেউ জানে না, তবে সন্ধ্যারাত্রে ছোট সাহেব এবং দেওয়ানজি রাহাতুন পুরের মোড়লের বাড়ি গিয়েছিলেন; সেখানে প্রজাদের ডাকিয়ে নীল বুনবে না কেন তার কৈফিয়ৎ চেয়েছিলেন। তারা রাজী হয়নি। ওঁরা ফিরে আসেন রাত এগারোটাব পর। শেষ রাত্রে গ্রামসুদ্ধ আগুন লেগে ছাইয়ের ঢিবিতে পরিণত হয়েছে। এই দুই ব্যাপারের মধ্যে কার্যকরণ-সম্পক বিদ্যমান বলেই সকলে সন্দেহ করচে।
পরদিন জেলা-ম্যাজিষ্ট্রেট মিঃ ডস্কিনসন নীলকুঠির বড় বাংলোতে সদলবলে এসে পৌছুলেন। তিনি যখন কুঠির ফিটন্ গাড়ি থেকে নামলেন, তখন শুধু বড় সাহেব ও ছোট সাহেব সদর ফটকে তাকে অভ্যর্থনা করবার জন্যে উপস্থিত ছিলেন-দেওয়ান রাজারাম নাক চুরুটের বাক্স এগিয়ে দেওয়ার জন্যে উপস্থিত ছিলেন বৈঠকখানায় টেবিলের পাশে। ডঙ্কিনসন্ এসেছিলেন শুধু নীলকুঠির আতিথ্য গ্রহণ করতে নয়, বড় সাহেব একটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই ম্যাজিস্টেটকে এখানে এনেছিলেন।