পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আগুন জিনিসটা কি তাই যেন তিনি কখনও শোনেন নি।

 ম্যাজিষ্ট্রেটের সন্দেহ হোল। তিনি রাজারামকে অনেকক্ষণ জেরা করলেন। ঘুঘু রাজারাম অমন অনেক জেরা দেখেচেন, ওতে তিনি ভয় পান না। রাহাতুনপুর গ্রামের লোকদের অনেককে ডাক দিলেন, তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। কিন্তু কুঠির সীমানায় দাড়িয়ে ওরা বেশি কিছু বলতে ভয় পেলে। ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব আজ এসেচে, কাল চলে যাবে, কিন্তু ছোট সাহেব। আর দেওয়ানজি চিরকালের জুজু। বিশেষত দেওয়ানজি। ওঁদের সামনে দাঁড়িয়ে ওঁদের বিরুদ্ধে কথা বলতে যাওয়া-সে অসম্ভব। রাহাতুনপুর গ্রামে ম্যাজিষ্ট্রেট স্বয়ং গেলেন দেখতে। সঙ্গে বড় সাহেব ও ছোট সাহেব। মস্ত বড় হাতী তৈরী হোল তঁদের যাবার জন্যে দু-দুটো। লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল রাহাতুনপুরের মাঠ।

 খুব বড় গ্রাম নয় রাহাতুনপুর, একপাশে খড়ের মাঠ, খড়ের মাঠের পুবদিকে এই গ্রামখানি-একখানাও কোঠাবাড়ি ছিল না। চাষী গৃহস্থদের খড়ের চালাঘর গায়ে গায়ে লাগা। পুড়ে ভস্মসাৎ হয়ে গিয়েচে। কোনো কোনো ভিটেতে পোড়া কালো বাঁশগুলো দাঁড়িয়ে আছে। মাটির দেওয়াল পুড়ে রাঙ্গা হয়ে গিয়েচে, কুমোর বাড়ির হাড়ি-পোড়ানো পনের মত দেখতে হয়েচে তাদের রং। কবীর সেখের গোয়ালে দুটো দামড়া হেলে গোরু পুড়ে মরেচে। প্রত্যেকের উঠানে আধ-পোড়া ধানের গাদা, পোড়া ধানের গাদা থেকে মেয়েরা কুলো করে ধান বেছে নিয়ে ঝাড়ছিল-মুখের ভাত যদি কিছুটা বাচাতে পারা যায়।

 অনেকে এসে কেঁদে পড়লো। দেওয়ানজির কাজ অনেকে বললে, কিন্তু প্রমাণ তো তেমন কিছু নেই। কেউ তাকে বা তঁর লোককে আগুন দিতে দেখেচে এটা প্রমাণ হোল না। ম্যাজিষ্ট্রেট তদন্ত ভালোভাবেই করলেন। বড় সাহেবকে ডেকে বললেন-আই অ্যাম রিয়্যালি সরি ফর দি পুওর বেগাস-

-উই মাস্ট ডু সামথিং ফর দেম।

 বড় সাহেব বললে-আই ওয়ানডার হু হাজ কমিটেড্, দিস ব্ল্যাক্ ডড্-আই সাসপেক্ট মাই অয়েলি-টাংভ্ দেওয়ান।

৪৩