সায়েবদের খানার সময় গয়া সেখানে থাকে না-
—লক্ষ্মী দিদি, শোনবো না, একটু নজর করতিই হবে-উঠে যাও দিদি। দ্যাখো, যদি গয়াকে বলে নিদেনে একটা বোতল যোগাড় করতি পারো-
বরদা বাগদিনী চলে গেল। এ অঞ্চলে বরদার প্রতিপত্তি অসাধারণ, কারণ ও হোল সুবিখ্যাত গয়া মেমের মা। গয়া মেমকে মোল্লাহাটি নীলকুঠির অধীন সব গ্রামের সব প্রজা জানে ও মানে। গয়া বরদা বাগদিনীর মেয়ে বটে, কিন্তু বড় সাহেবের সঙ্গে তার বিশেষ ঘনিষ্ঠতা, এই জন্যেই ওর নাম এ অঞ্চলে গয়া মেম।
গয়া খারাপ লোক নয়, ধরে পড়লে সাহেবকে অনুরোধ ক’রে অনেকের ছোটবড় বিপদ সে কাটিয়ে দিয়েছে। মেয়ে মানুস কিনা, পাপপথে নামলেও ওর হৃদয়ের ধর্ম বজায় আছে ঠিক। গয়ার বয়স বেশি নয়, পঁচিশের মধ্যে, গায়ের রং কটা, বড় বড় চোখ, কালে চলের ঢেউ ছেড়ে দিলে পিঠি পর্যন্ত পড়ে, মুখখানা বড় ছাচের কিন্তু এখনো বেশ টুলটুলে। সর্বাঙ্গের সুঠাম গড়নে ও অনেক ভদ্রঘরের সুন্দরীকে হার মানায়। পথ বেয়ে হেঁটে গেলে ওর দিকে চেয়ে থাকতে হয়। খানিকক্ষণ। গয়া মেমকে কিন্তু বড় সাহেবের সঙ্গে কেউ দেখেনি। অথচ ব্যাপারটা এ অঞ্চলে অজানা নয়। সে হোল বড় সাহেবের আয়া, সর্বদা থাকে হলদে। কুঠিতে, যেটা বড় সাহেবের খাস কুঠি। ফরসা কালাপেড়ে শাড়ী ছাড়া সে পরে না, হাতে পৈঁছে, বাজুবন্ধ, কানে বড় বড় মাকড়ি-ঘন বনের বুকচেরা পাহাড়ী পথের মত বুকের খাজটাতে ওর টু লছে সরু মুড়কি-মাদুলী, সোনার হারে গাঁথা।
ডোমবাগদির মেয়েরা বলে-গয়া দিদি এক খেলা দেখালে ভালো।
ওদের মধ্যে ভালো ঘরের ঝি-বৌয়েরা নাক সিটিকে বলে-আমন পৈছে বাজুবন্ধের পোড়া কপাল।
নিশ্চয় ওদের মধ্যে অনেকে ঈর্ষা করে ওকে। এর প্রমাণও আছে। অনেকে প্রতিযোগিতায় হেরেও গিয়েছে ওর কাছে। ঈর্ষা করবার সঙ্গত কারণ বৈকি!