বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সে ভবানী বাঁড়ুয্যের খড়ের ঘরে এসে কেমন মানিয়ে নিয়ে ঘর আলো করে বসেচে। এখানে কুলুঙ্গি, ওখানে তাক তৈরি করচে নিজের হাতে। নিজেই ঘর গোবর দিয়ে পরিপাটি করে নিকুচ্চে, উনুন তৈরি করচে পুকুরের মাটি এনে, সন্ধ্যের সময় বসে কাপাস তুলোর পৈতে কাটে একদণ্ড বসে থাকবার মেয়ে সে নয়। চরকির মত ঘুরচে সর্বদা।

 বিলুও অনেক সাহায্য করে। দিদি রাঁধে, ওরা কুটনো কুটে দেয়। বিলু ও নিলু দিদির নিতান্ত অনুগত সহোদরা, দিদি যা বলে তাই সই। দিদি’ ছাড়া ওরা এতদিন কিছু জানতো না-অবিশ্যি আজকাল স্বামীকে চিনেচে দুজনেই। স্বামীর সঙ্গে বসে গল্প করতে ভারি ভালো লাগে।

 বৌদিদি জগদম্বা বলেন-ও নিলু, আজকাল যে এ-বাড়ি আর আসিস নে আদপে?

 নিলু সলজ্জসুরে বলে-কত কাজ পড়ে থাকে ঘরের। দিদি একা, আমরা না থাকিলি-

 —তা তো বটেই। আমাদের তো আর ঘর সংসার ছিল না, কেবল তোদেরই হয়েচে, না?

 —যা বলো।

 —তিলুকে ওবেলা তাই বলছিলাম-

 —ও বাবা, দিদি তোমার জামাইকে ফেলি আর খোকনকে ফেলি স্বগগে যেতি বল্লিও যাবে না।

 —তা জানি।

 —দিদি একা পারে না বলে খোকনকে নিয়ে আমাদের থাকতি হয়।

 —বড় ভালো মেয়ে আমার তিলু। সন্দের পর একটু পাঠিয়ে দিস। উনি কুঠি থেকে আগে আগে ফিরে এলে তিলুই ওঁর তামাক সেজে দিতো জানিস তো। উনি রোজ ফিরে এসে বলেন, তিলু বাড়ি না থাকলি বাড়ি অন্ধকার।

 —দিদিকে বলবো এখন।

 —খোকাকে নিয়ে যেন আসে না, সন্দের পর।

৪৯
ইছামতী-৪