পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 ভবানী বললেন—তিলু, বসবে? চলো নদীর ধারে গিয়ে একটু বসা যাক।

 তিলুর নিজের কোনো মত নেই আজকাল। বললে—চলুন। কেউ দেখতি পাবে না তো?

 —পেলে তাই কি?

 —আপনার যা ইচ্ছে—

 —রায়েদের ভাঙাবাড়ির পেছন দিয়ে চলো। ও পথে ভূতের ভয়ে লোক যায় না।

 নদীর ধারে এসে দুজনে দাঁড়ালো বাঁশঝাড়ের তলায়, শুকনো পাতার, রাশির ওপরে। তিলু বললেন, আঁচলটা পেতে নিচে বসুন-

 —তুমি আঁচল খুলো না, ঠাণ্ডা লাগবে-

 —আমার ঠাণ্ডা লাগে না, বসুন আপনি—

 —বেশ লাগচে, না?

 তিলু হেসে বললে—সত্যি বেশ, সংসার থেকে তো বেরুনোই হয় না আজকাল—কাজ আর কাজ। বিলু নিলু সংসারের কি জানে? ছেলেমানুষ। আমি যা বলে দেবে, তাই ওরা করে। সব দিকেই আমার ঝক্কি।

 তিলুর কথার সুরে যশোর জেলার গ্রাম্য টানগুলি ভবানী বাড়ুয্যের এত মিষ্টি লাগে। তিনি নিজে নদীয়া জেলার লোক, সেখানকার বাংলার উচ্চারণ ও বাচনভঙ্গি সুমার্জিত। এদেশে এসে প্রথমে শুনলেন এই ধরনের কথা।

 হেসে বল্লেন-শোনো, তোমাদের দেশে বলে কি জানো? শিবির মাটি, পূবির ঘর —মুগির ডালি ঘি দিলি শীরির তার হয়—

 —কি, কি?

 —মুগির ডালি মানে মুগের ডালে, ঘি দিলি মানে ঘি দিলে—

 —থাক ও, আপনার মানে বলতি হবে না। ও কথা আপনি প্যালেন কোথায়?

 —এই দেখচি দেশের বুলি ধরেচ, বলতি হবে না, প্যালেন কোথায়। তবে মাঝে মাঝে চেপে থাকো কেন?

৫১