পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 —লজ্জা করে আপনার সামনে বলতি-

 ভবানী তিলুকে টেনে নিলেন আরো কাছে। জ্যোৎস্না বাঁকা ভাবে এসে সুন্দরী তিলুর সমস্ত দেহে পড়েছে, বয়স ত্রিশ হোলেও স্বামীকে পাবার দিনটি থেকে দেহে ও মনে ও যেন উদ্ভিন্নযৌবনা কিশোরী হয়ে গিয়েছে। বালিকা- জীবনের কতদিনের অতৃপ্ত সাধ, কুলীনকুমারীর অতি দুর্লভ বস্তু স্বামী-রত্ন এতকালে সে পেয়েছে হাতের মুঠোয়। তাও এমন স্বামী। এখনো যেন তিলুর বিশ্বাস হয় না। যদিও আজ দু’বছর হয়ে গেল।

 তিলু বল্লে আমার মনে হয় কি জানেন? আপনি আসেন নি বলেই আমাদের এতদিন বিয়ে হচ্ছিল না—কুলীনের মেয়ের বিয়ে-

 —আচ্ছা, একটা কথা বুঝলাম না। রায় উপাধি তোমাদের, রায় আবার কুলীন কিসের। রায় তো শ্রোত্রিয়—

 —ওকথা দাদাকে জিগোস করবেন। আমি মেয়েমানুষ, কি জানি। আমরা কুলীন সত্যিই। আমার দুই পিসি ছিলেন, তাঁদের বিয়ে হয় না কিছুতেই। ছোট পিসি মারা যাওয়ার পরে বড় পিসিকে বিয়ে ক'রে নিয়ে গেল কোথায় অজ বাঙাল দেশে ভালো কুলীনের ছেলে-

 —আহা, তোমরা আর বাঙাল দেশ বোলা না। যশুরে বাঙাল কোথাকার! মুগির ডালি ঘি দিলি ক্ষীরির তার হয়। শিবির মাটি, পূবির ঘর—

 —যান আপনি কেবল ক্ষ্যাপাবেন আর আপনাদের যে গেলুম মলুম হালুম হুলুম-হি হি-হি হি-

 -আচ্ছা থাক! তারপর?

 —তখন বড় পিসির বয়েস চল্লিশের ওপর। সেখানে গিয়ে আগের সতীনের বড় বড় ছেলেমেয়ে, বিশ-ত্রিশ বছর বয়েস তাদের। সতীন ছিল না। ছেলে-মেয়েরা কি যন্ত্রণা দিতে! সব মুখ বুজে সহ্যি করতেন বড় পিসি। নিজের সংসার পেয়েছিলেন কতকাল পরে। একটা বিধবা বড় মেয়ে ছিল, সে পিসিকে কাঠের চ্যালার বাড়ি মারত, বলতো-তুই আবার কে? বাবার নিকের বৌ, বাবার মতিচ্ছন্ন হয়েছে তাই তোকে বিয়ে করে এনেচে। তাও পিসি মুখ বুজি

৫২