অনাটন হয়ে ওঠছে। মানুষের খাবার দিন চলে যাচ্ছে, আর খাবে কি? এই সবাইপুরে দুধ ছিল ট্যাকায় বাইশ সের চব্বিশ সের। এখন আঠাবো সেরের বেশি কেউ দিতি চায় না। নালু পাল বললে-আঠারো সের কি বলচো খুড়ো? আমাদের গাঁয়ে ষোল সেরের বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। একটু সন্দেশ করবো বলে ছানা কিনতি গিয়েছিলাম অঘোর ঘোষের কাছে, তা নাকি দু' আনা করে খুলি! এক খুলিতে বড্ড জোর পাঁচপোয় ছানা থাকুক-
অক্রূর জেলে হতাশভাবে বললে-নাঃ—আমাদের মত গরীবগুরবো না খেয়েই মারা যাবে। অচল হয়ে পড়লো কেরমেশে।
—তা সেই রকমই দাড়িয়েছে।
দবিরুদ্দি নিজেকে যথেষ্ট তিরস্কৃত বিবেচনা করে এক একটা লাউ এক এক পয়সা হিসাবে দাম চুকিয়ে নিয়ে হাটের দিকে চলে গেল। নালু পাল তাকে একটা পয়সা দিয়ে বললে-অমনি এক কাজ করবা। এক পয়সার চিংড়ি মাছ আমার জন্যি কিনে এনো। লাউ দিয়ে চিংড়ি দিয়ে তবে মজে। বেশ ছটকালো দেখে দোয়াড়ির চিংড়ি আনবা।
হরি নাপিত বললে—চালখানা ছেয়ে নেবো বলে ঘরামির বাড়ি গিইছিলাম। চার আনা রোজ ছেল বরাবর, সেদিন সোনা ঘরামি বললে কিনা চার আনায় আর চাল ছাইতে পারবে না, পাঁচ আনা করি 'দিতি হবে। ঘরামি জন পাঁচ আনা আর একটা পেটেল দু’ আনা—তাহলি একখানা পাঁচ-চালা স্বর ছাইতে কত মজুরি পড়লে বাপধনেরা? পাঁচ-ছ টাকার কম নয়।
বর্তমান কালের এই সব দুর্মূল্যতার ছবি অক্রূরকে, এত নিরাশ ও ভীত করে তুললো যে সে বেচারী আর তামাক না খেয়ে কল্কেটি মাটিতে নামিয়ে রেখে হনহন্ করে চলে গেল।
কিন্তু কিছুদূর গিয়েই আবার তাকে ফিরতে হোল। অক্রূর জেলের বাড়ি পাশের গ্রাম পুস্তিঘাটায়। তার বড় ছেলে মাছ ধরার বাধা দিয়েচে সবাইপুরের বাওড়ে। হঠাৎ দেখা গেল দুরে ডুমুরগাছের তলায় সে আসছে, মাথায় চুপড়িতে