মাঝে মাঝে যাতায়াত করার মূলেই যে মাসিদের পাড়ার অম্বিক প্রামাণিকের এই মেয়েটি-তা হয়তো স্বয়ং মাসিও খবর রাখেন না। কিন্তু না, কথা তা নয়।
বিয়ে করতে চাইলে, তুলসীর বাবা হাতে স্বৰ্গ পাবেন সে জানে। বিয়ে করতে হলে এমন একটি শ্বশুর দরকার যে তার ভাল অভিভাবক হতে পারে। সে নিজে অভিভাবকশূন্য, তার পেছনে দাঁড়িয়ে তাকে উৎসাহ দেবার কেউ নেই, বিপদে আপদে পরামর্শ করবার কেউ নেই। বাবা মারা যাওয়ার পর একা তাকে যুঝতে হচ্ছে সংসারের মধ্যে। বিনোদ প্রামাণিক ওই গ্রামের ছোট আড়তদার, সর্ষে, কলাই, মুগা কেনাবেচা করে, খড়ের চালা আছে খান-দুই বাড়িতে। এমন কিছু অবস্থাপন্ন গৃহস্থ নয়, হঠাৎ হাত পাতলে পঞ্চাশ-একশো বার করবার মত সঙ্গতি নেই ওদের। নালুর এখন কিন্তু সেটাও দরকার। ব্যবসার জন্যে টাকা দরকার। মাল সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে, এখুনি বায়ন করতে হবে-এ সময়ে ব্যবসা আরো বড় করে ফাঁদতে পারতো। ব্যবসা সে বুঝেচে— কিন্তু টাকা দেবে কে?
নালুর মা ভাত নিয়ে বসেছিল রান্নাঘরের দাওয়ায়। ও আসতেই বললে -বাবা নালু এলি? কতক্ষণ যে বসে ঢুলুনি নেমেচে চকি।
—ভাত বাড়ো। খিদে পেয়েচে।
—হাত পা ধুয়ে আয়। ময়না জল রেখে দিয়েচে ছেঁচতলায়।
—ময়না কোথায়?
—এর মধ্যি ঘুম?
—ওম, কি বলিস? ছেলেমানুষের চকি ঘুম আসে না এত রাত্তিরি?
—পরের বাড়ি যেতে হবে যে। না হয়। আর এক বছর। তারা খাটিয়ে নেবে। তবে খেতে দেবে। বসে খেতে দেবে না। চকি ঘুম এলি তারা শোনবে না।
নালু ভাত খেতে বসলো। উচ্ছেচচ্চড়ি আর কলাইয়ের ডাল। ব্যস, আর কিছু না। রাঙা আউস চালের ভাত আর কলাইয়ের ডাল মেখে খাবার সময় তার মুখে এমন একটি তৃপ্তির রেখা ফুটে উঠলো। যা বসে দেখবার ও উপভোগ করবার