জ্যোৎস্না উঠেছে কৃষ্ণাতিথির।
নন্দীদের বাগানে শেয়াল ডেকে উঠলো। রাত হয়েচে নিতান্ত কমও নয়। এ পাড়া নিষুতি হয়ে এসেছে।
ময়না আবার এসে বললে-পা টিপে দেবো?
—না না, তুই যা। ভারি আমার—
—দিই না।
—রাত হয়েছে। শুগে যা। কাল সকালে আমায় ডেকে দিবি। সাতবেড়েতে যাবো জমি দেখতি।
—ডাকবো। পা টিপতি হবে না তো?
—না, তুই যা।
নালু পাল বাড়ি ফিরবার পথে সন্নিসিনীর আখড়ায় একটা ক'রে আধলা পয়সা দিয়ে যায় প্রতি রাত্রে। দেবদ্বিজে ওর খুব ভক্তি, ব্যবসায় উন্নতি তো হবে ওঁদেরই দয়ায়। সম্মিসিনীর আশ্রম বাঁওড়ের ধারের রাস্তার পাশে প্রাচীন এক বটবৃক্ষতলে, নিবিড় সঁই-বাবলা বনের আড়ালে, রাস্তা থেকে দেখা যায় না। সন্নিসিনীর বাড়ি ধোপাখোলা, সে নাকি হঠাৎ স্বপ্ন পেয়েছিল, এ গ্রামের এই প্রাচীন বটতলার জঙ্গলে শ্মশানকালীর পীঠস্থান সাড়ে তিনশো বছর ধরে লুকোনো। তাই সে এখানে এসে জঙ্গল কেটে আশ্রম বসিয়েছিল বছর সাতেক আগে। এখন তার অনেক শিষ্যসেবক, পূজো-আচ্চা ধন্না দিতে আসে ভিন্ন গ্রামের কত লোক।
সন্ধ্যার পরে যারা আসে, বৈঁচি গাছের জঙ্গল ঘেঁষে যে খড়ের নীচু ঘরখানা, যার মাথার উপর বটগাছের বড় ডালটা, যেখানে বাসা বেঁধেছে অজস্র বাবুই, যেখানে কোলে কলাবাদুড়ের পাল রাত্রের অন্ধকারে, সেই ঘরটির দাওয়ায় বসে ওরা গাঁজার আড্ডা জমায়।
নালুকে বললে ছিহরি জেলে,—কেডা গা? নালু?
—হ্যাঁ।